• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেষ কর্মদিবসে বেআইনি দলিল রেজিস্ট্রি, নেপথ্যে কী

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৪  

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে শেষ কর্মদিবসে বেআইনিভাবে জমি রেজিস্ট্রি করানোর অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিস্ট্রার শিরিন আকতারের বিরুদ্ধে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্ধারিত সময়ের পর ৯ বিঘা জমির দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন এই সাব-রেজিস্ট্রার। গত ২৩ মে তার শেষ কর্মদিবস ছিল দেবীগঞ্জে।

২৩ মে দেবীগঞ্জ পৌরসভার নতুনবন্দর এলাকার ৯০ বছর বয়সী জাহেদ আলীকে তার মেয়েরা জমি রেজিস্ট্রি নেয়ার উদ্দেশ্যে হুইল চেয়ারে বসিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। অথচ তিনি বার্ধক্য ও পক্ষাঘাত জনিত কারণে চলাফেরা ও কথা বলতে পারেন না। জাহেদ আলীর অন্য ওয়ারিশরা প্রথম থেকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। অথচ সাব-রেজিস্ট্রার আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন। দলিল নম্বর ১৪১৮। অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে তা সংরক্ষিত আছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে জাহেদ আলীর বড় ছেলে রেজানুর হাসান মঞ্জুর (মৃত) মেয়ে শাহনাজ পারভীন বলেন, আমাকে আমার বাবার হক থেকে বঞ্চিত করে আমার ৭ ফুফু নিজেদের নামে জমি লিখে নিলো। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাব-রেজিস্ট্রার শিরিন আক্তার অফিস ত্যাগ করার সময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের মুখে বলেন, আপনারা আমার জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে কমপ্লেইন করেন। আমি থানায় এবং ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। দাতা রাজি ছিল তাই জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে।

এর আগে, বিকেল পৌনে ৬টায় সাব-রেজিস্ট্রার শিরিন আক্তারকে মোবাইলে জাহেদ আলীর কাছে থেকে জোর করে জমি রেজিস্ট্রি নেয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়। সে সময় তিনি জানান, এমন কেউই তার সঙ্গে দেখা করেননি। 

দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, দুপুরেও জাহেদ আলীর মেয়েরা সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তখন তাদের চলে যেতে বলা হয়।

দেবীগঞ্জ থানার এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, জোর করে জমি রেজিস্ট্রি নেয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এখানে এসেছিলাম সন্ধ্যা সাড়ে চটার দিকে। এসে দেখি দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। এর আগেও আমরা একবার এসেছিলাম। তখন সাব-রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, তাই ফিরে যাই।

জাহেদ আলীর নাতনি শাহনাজ পারভীন অভিযোগ করে বলেন, এই পুরো ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রারকে সহযোগিতা করেন দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত মঞ্জুরুল ইসলাম মনু। তিনি দলিলটি সম্পাদনা করেন।

পুলিশের উপস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীরা জমির দাতা জাহেদ আলীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার মেয়েরা বাধা দেন। এরপর সেখানে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মনু গণমাধ্যম কর্মীদের বাধা দিয়ে নিজেকে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি পরিচয় দেন। এরপর গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, সরকার আমাকে লাইসেন্স দিছে কিসের জন্য, আমাকে আইন শিখতে হবে?

দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, দুপুরে তারা একবার এসেছিলেন কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরে সন্ধ্যায় সেই জমি রেজিস্ট্রি হয়। এছাড়া বিকেল ৩টার পর কোনোভাবেই জমি রেজিস্ট্রি করতে পারবেন না সাব-রেজিস্ট্রার।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বকশির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

অভিযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রার শিরিন আক্তার বোদা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বে আছেন। দেবীগঞ্জে সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় সেখানকার অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন তিনি এবং গত বৃহস্পতিবার দেবীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ছিল তার শেষ কর্ম দিবস।

প্রসঙ্গত, জাহেদ আলী বার্ধক্য ও পক্ষাঘাতজনিত কারণে স্বাভাবিক চলাফেরা ও কথা বলতে পারেন না। তাকে জমি রেজিস্ট্রির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –