• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাতের আঁধারে পাচার হচ্ছিল ২০ লাখ টাকার চা!

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২৪  

পঞ্চগড়ে রাতের আঁধারে কাভার্ডভ্যানে প্রক্রিয়াজাতকরণ বস্তাভর্তি ১২ হাজার ৫০০ কেজি ওজনের চা আটক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (কাস্টমস) কর্মকর্তারা। অভিযোগ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কালোবাজারে পাচার করা হচ্ছিল চায়ের বস্তাগুলো। তবে বিষয়টি অধিকতর তদন্তে চাসহ গাড়িটি উদ্ধার করে থানা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। 

রোববার (১৪ জুলাই) রাতে পঞ্চগড় সদরের অমরখানা ইউপির বোড অফিস বাজার এলাকায় মহাসড়কে কাভার্ডভ্যানটিকে আটক করা হয়।

জানা গেছে, রাতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে জাতীয় মহাসড়ক ধরে অজানা গন্তব্যে যাচ্ছিল হিনো ট্রেডার্স নামে একটি কাভার্ডভ্যান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বোড অফিস বাজার এলাকায় মহাসড়কে কাভার্ডভ্যানটির গতিরোধ করে অভিযান চালায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ সময় প্রায় ২০ লাখ টাকার ১২ হাজার ৫০০ কেজির ২৫০ বস্তা চা আটক করা হয়। 

জানা যায়, চাগুলো তেঁতুলিয়ার মাঝিপাড়া এলাকার সুরমা অ্যান্ড পূর্ণিমা চা কারখানা তৈরিকৃত চা। রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জমায়েত হয় স্থানীয়রা। এদিকে বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় নেয়ায় নানা অভিযোগ উঠে কাস্টমস কর্তকর্তাদের বিরুদ্ধে। কালক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছুটা তর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা। 

এর আগেও একাধিকবার সুরমা অ্যান্ড পূর্ণিমা চা কারখানার চা উদ্ধার করেছে কাস্টমসসহ চা বোর্ড। সর্বশেষ গত ২৯ মে ৪৯৭ কেজি বস্তা ভর্তি চা কালোবাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। ১১ জুলাই চা বোর্ডের চেয়ারম্যান শুনানি করলে কারখানাটির মালিক ক্ষমা প্রার্থনা করে মুচলেকা দেওয়ায় মালিক শেখ ফরিদকে জরিমানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কারখানা মালিকরা এভাবে রাতের আঁধারে ভালো মানের চা কালোবাজারে পাচার করে দেন। এতে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, একই সঙ্গে এর কারণে তারা খারাপ চা অকশনে তুলে লোকসান দেখিয়ে সিন্ডিকেট করছেন। 

স্থানীয় মোকলেছুর রহমান বলেন, এর আগেও কালোবাজারি করতে গিয়ে ধরা পড়ে কারখানাটি। তাদের এই কালোবাজারির কারণে শুধু চা চাষিরাই নয় সরকারও রাজস্ব হারিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে। কাস্টমস এর ছাড়পত্র ছাড়া কোনো গাড়ি যেতে পারবে না। কিন্তু দিনের পর দিন তারা এই কাজ করে যাচ্ছে। তাই মনে করছি কাস্টমস এর দুর্বলতা রয়েছে। তারা অসাদু উপায় অবলম্বন করে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে।

অমরখানা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, আজকে এ সব চা কারখানার জন্য চাষিদের অবস্থা খুব নাজুক। সরকারি টেক্স ফাঁকি দিয়ে মালগুলো যাচ্ছে। অবশ্যই ঊদ্ধতন কর্তৃপক্ষ জানে বলে আমি বুঝি। তারা গাড়ি আটক করে থানা বা অফিসে নিয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে। যেহেতু তাদের ছাড়পত্র ছাড়া বের হয়েছে। কিন্তু তা না করে কাস্টমস ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি আটক করে কী করে। এমন অপরাধে জড়িত থাকা কারখানার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নোমান হাসান বলেন, চা প্রক্রিয়াজাত শেষে কাস্টমস ছাড়পত্র দিলে সিলগালা হয়ে গাড়ি তারপর যাবে। কিন্তু এখানে এটার বিপরীত দেখছি। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দিলে তারা এই অভিযান পরিচালনা করতো না। অতএব এই গাড়িটি কালোবাজারে যাচ্ছিল তা প্রমাণিত।

জাতীয় রাজস্ব বোড কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশন পঞ্চগড়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ইবনে রাসেল বলেন, কালোবাজারে চা পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে। এ সময় প্রয়োজনীয় নথিতে কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকায় সন্দেহমূলকভাবে চাসহ কাভার্ডভ্যানটি উদ্ধার করে পুলিশি হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে। 

বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, গত কয়েক মাস আগেও এই চা কারখানার অবৈধ চা আটক করা হয়। গত ১১ জুলাই চা বোর্ড চেয়ারম্যান নিজেই তার অপরাধের শুনানি করেছেন। এ সময় কারখার মালিক শেষ বারের মত ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন। তাই তাকে সতর্ক করতে চেয়ারম্যান শুধু জরিমানা করেছেন। তবে আবারো একই অপরাধের অভিযোগে কারখানাটির মাল আটক হয়েছে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দিলে এই কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমরা ধারণা করছি, এটা কালোবাজারে যাচ্ছিলো।

এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও উদ্ধারকৃত চা নিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট রয়েছে বলে জানান কারখানাটির মালিক শেখ ফরিদ। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –