• শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ২ ১৪৩১

  • || ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ওসি সেজে ফোন, প্রতারক চক্রের ফাঁদে প্রধান শিক্ষক

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৪  

সরকারের বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নতুন ফাঁদ পেতেছে এক প্রতারক চক্র। তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মোবাইল কলেই হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এবার পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগীসহ প্রতারক চক্রের ফোন পাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রথমে প্রতারক চক্র মোবাইলে বিকাশ মেসেজ পাঠায়। এর কিছুক্ষণ পর ফোন দেয়। ফোনে পরিচয় দেয় তিনি থানার ওসি। কথা শুরু করেন বেতন স্কেল ও গ্রেড নিয়ে। বলার ধরন খুব ভাবগম্ভীর। কথার ফাঁকেই বলেন, ‘আপনার নাম্বারে ভুল করে বিকাশে ২০ হাজার টাকা চলে গেছে। এ টাকা পুলিশের এসপিকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুল করে আপনার নাম্বারে চলে গেছে।’ ফোন পাওয়া ব্যক্তি সেটা চেক করতে চাইলে সেটার সুযোগ দেন না প্রতারকরা। ফোনে রেখেই তার স্কুলের সহকারী শিক্ষককে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। প্রশাসনকে সহযোগিতা না করলে বাড়ি থেকে তুলে নিতে হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছেন তারা। মোবাইলে প্রতারকদের এমন কথাবার্তায় ভয় পেয়ে অনেকেই বিকাশে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন তেঁতুলিয়ার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক নারী প্রধান শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভুক্তভোগী প্রাথমিক শিক্ষক বলেন, মোবাইলে কল আসলে ফোন রিসিভ করি। ফোনে তিনি থানা পুলিশের ওসি পরিচয় দেন। প্রথমে তিনি আমার বেতন স্কেলের গ্রেড জানতে চান। গ্রেড ১০ বললে তিনি নিজেকে গ্রেড পঞ্চম বলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর কথাবার্তা বলতে থাকেন। পরে বলেন আপনার বিকাশ নাম্বারে ভুল করে ২০ হাজার টাকা চলে গেছে। আমি পুলিশ সুপার (এসপির) সামনে বসে আছি। এ টাকা এসপিকে দেওয়ার কথা ছিল। ভুলক্রমে আপনার নাম্বারে চলে গেছে। এক্ষুণি একটা নাম্বার দিচ্ছি, সেটা পাঠিয়ে দিন। মেসেজ চেক করতে চাইলে ফোন কাটতে নিষেধ করেন। প্রশাসনকে সহযোগিতা না করলে তার লোক দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে আনার হুমকি দেন। ভয়ে বাধ্য হয়েই তাদের দেওয়া নাম্বারে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে জানতে পারি প্রতারণার শিকার হয়েছি। এ ঘটনায় তেঁতুলিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছি। 

একই ভুল করতে যাচ্ছিলেন উপজলোর সদর ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অব.)। তিনি জানান, সোমবার দুপুরে গোসল করতে যাচ্ছিলাম। ওই সময় ফোনটা বেজে উঠলে কল রিসিভ করি। ওপাশ থেকে তিনি বলছেন, ‘থানার ওসি বলছি। আপনার গ্রেড কত? বললাম-১০ম গ্রেড। আমার ৫ম গ্রেড। একজন ৫ম গ্রেড অফিসারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এটি জানেন না। আপনার মধ্যে ভদ্রতার কোনো ছিটেফোঁটা নেই।’ কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ওসি আমাকে ফোন দিয়েছেন। কি কারণে ফোন দিয়েছেন এটিই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তেঁতুলিয়া থানার ওসি হিন্দু, উনাকে সালাম দেব না আদাব দিব তাও ভেবে পাচ্ছি না। এদিকে সালাম না দেওয়ায় মহাশয় আমার উপর খুবই ক্ষেপেছেন।

নেটওয়ার্ক সমস্যা বলে আমাকে তিনি বাইরে ফাঁকা জায়গায় যেতে বলেন। আমার ফোন ও লোকেশন ট্র্যাক করা হচ্ছে বলে জানায়। যদি প্রশাসনকে সহযোগিতা না করি তাহলে নাকি আমাকে তার লোক দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। ওই ব্যক্তি বলেন, এসপি সাহেবের কাছে পাঠানো টাকা নম্বর ভুলের কারণে আপনার ফোনে চলে গেছে। আপনি মেসেজ পেয়েছেন? আপনার নাম্বারে ভুল করে ২০ হাজার চলে গেছে। এসপি স্যার আমার সামনে বসা। আমি যা বলব তা আগে শুনবেন। আপনি এখন বিকাশের দোকানে যাবেন। আমি নম্বর দেব ওই নম্বরে ২০ হাজার পাঠিয়ে দোকানদারের শেষ দুটো নম্বর আমাকে জনাবেন। জ্বি-আচ্ছা বলে বাজারের বিকাশের দোকানে গেলাম। বাজারের বিকাশ এজেন্ট বিপ্লব জানালেন এটা হ্যাকারের নাম্বার। টাকা পাঠাবেন না। গতকাল এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

আলমগীর হোসেন বলেন, তারা ফোনে এমনভাবে কথা বলছেন ভয় পাওয়ার মতো। ফোন কাটতেও দেয় না। বিষয়টি নিয়ে দু:শ্চিন্তায় আছি। শুনেছি তেঁতুলিয়ার অনেক শিক্ষককে এভাবে ভুয়া মেসেজ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রতারকচক্র। এরকম অভিযোগ আরও বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের। তারা বিষয়টি থানা পুলিশের মাধ্যমে এ প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।

এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ওই নাম্বারে লোকেশন ট্র্যাক করলে দেখা যায় এটি বগুড়ায়। তবে এখানকার মানুষদের সচেতন হতে হবে। কেন তারা এভাবে টাকা দিয়ে দেবে। পুলিশ তো এভাবে ফোন করে না। তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য থানায় ফোন করা উচিত। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ধরনের প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনতে সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –