• মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

লেবাননে হামলার আগে যেভাবে সতর্কবার্তা দিয়েছিল ইসরায়েল

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

লেবাননে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলায় অন্তত ৪৯২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা বলছে এটি গত বিশ বছরের মধ্যে প্রাণহানির দিক থেকে সবচেয়ে সংঘাতময় দিন। হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে হিজবুল্লাহর গড়ে তোলা অবকাঠামো ধ্বংস করতে তারা  ১৩শ’ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।জানা গেছে, হামলা চালানোর আগে স্থানীয়দেরকে সতর্ক করে বার্তা পাঠিয়েছিল ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। সোমবার ভোরে দক্ষিণ লেবানন এবং রাজধানী বৈরুতের আশেপাশের বাসিন্দারা একটি লেবাননের নম্বর থেকে এসএমএস এবং ফোন কল পেয়েছিলেন। হিজবুল্লাহ সক্রিয় রয়েছে, এমন এলাকা থেকে লেবাননের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এসএমএস ও ফোন কলের বার্তায়। এ ঘটনা লেবাননে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা সৃষ্টি করে। এছাড়াও ইসরায়েল তার উত্তর প্রতিবেশীর টেলিকম নেটওয়ার্ক হ্যাক করেছে বলেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসামরিক নাগরিকদের মোবাইল ফোন ও ল্যান্ডফোনে বার্তা পাঠানোর ঘটনাটি লেবাননের ওপর ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বেরও একটি রিমাইন্ডার।

ইসরায়েল যেভাবে সতর্কবার্তা দিয়েছিল

আল জাজিরার বৈরুত সংবাদদাতা মাজেন ইব্রাহিম জানিয়েছেন, কিছু মানুষ তাদের মোবাইল ফোনে বা ল্যান্ডফোনে রেকর্ড করা কল পেয়েছিলেন এবং কেউ কেউ পাঠ্য বার্তা পেয়েছিলেন। সব বার্তা একই ছিল।

আল জাজিরার দেখা একটি বার্তা- যেটি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাঠানো হয়- তাতে লেখা ছিল: আপনি যদি হিজবুল্লাহ রয়েছে এমন একটি ভবনে থাকেন, তাহলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই এলাকা থেকে দূরে থাকুন।

সোমবার আল জাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বেসামরিক নাগরিকদের সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য রেডিও চ্যানেলগুলোও হ্যাক করা হয়েছিল। সতর্কবার্তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে বোমা হামলা শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যায় রাজধানী বৈরুতেও বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি সোমবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, আমরা লেবাননের গ্রামের বাসিন্দাদেরকে (ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর) প্রকাশিত বার্তা ও সতর্কতার প্রতি মনোযোগ দিতে এবং তাদের নিজেদের প্রতি মনোযোগ দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।

আল জাজিরার বৈরুত সংবাদদাতা মাজেন ইব্রাহিম জানিয়েছেন, সোমবার যেসব এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়; গত বছরের ৮ অক্টোবর ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই সেসব এলাকায় একের পর এক হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

তিনি বলেন, তারা এমন সম্প্রদায় যারা ১১ মাসের যুদ্ধে ১ লাখেরও বেশি মানুষকে চলে যেতে দেখেছে। শুধুমাত্র কিছু মানুষ সেখানে রয়ে গেছে- যারা শুরু থেকেই এলাকা ছাড়তে রাজি ছিলেন না।

লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার তথ্যানুসারে, রাজধানী বৈরুতে সোমবার যারা রেকর্ড করা কল পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি ছিলেন।

আল জাজিরার বৈরুত সংবাদদাতা মাজেন ইব্রাহিমের মতে, ‘আমরা যা জানি না, তা হলো- ইসরায়েল কীভাবে লেবাননের বেসামরিক মানুষদের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে- মোবাইল নম্বর, লোকেশন। …এটা কী ডেটা ফাঁসের কারণে নাকি ইসরায়েল লেবাননের টেলিকম অবকাঠামো হ্যাক করেছে?

ইসরায়েল বলছে, বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি কমাতে বোমা হামলার আগে তাদের সেনাবাহিনী সতর্কবার্তা পাঠায়। গাজায় চলমান যুদ্ধের সময়েও দেশটিকে এই যুক্তি দিতে দেখা গেছে।  কিন্তু হামলাস্থলের ঘটনাগুলো ইসরায়েলের এই তত্ত্বকে সমর্থন করে না। অনেক ক্ষেত্রে, ইসরায়েলের বোমা এমন ভবনগুলোতে ফেলা হয়েছে যেগুলোর বাসিন্দারা কোনো সতর্কতা পায়নি৷ যেমন: গাজার পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক নাগরিকদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা হয়েছে।

হামলার আগে ইসরায়েলি সতর্কতা পাঠ্য বার্তা, ফোন কল বা ড্রপ করা লিফলেট আকারে আসতে পারে। কিন্তু গাজায় মোবাইলে সতর্কবার্তা দেওয়া প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বহু বছর থেকেই বলছেন, এটিও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের একটি উদাহরণ। ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রিমাইন্ডার যে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিতভাবে জানে- ফিলিস্তিনিরা কখন কোন এলাকায় রয়েছেন।

সুনির্দিষ্ট সতর্কতার জন্য ব্যবহৃত একই সরঞ্জামগুলো ইসরায়েলকে তার ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতেও সহায়তা করছে। ইসরায়েলের হামলার যে প্যাটার্নের সঙ্গে গাজা পরিচিত, সোমবার সেটি লেবাননে প্রসারিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন তিনি চান না যে লেবানন আরেকটি গাজায় পরিণত হোক।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফরেন অ্যাফেয়ার্স প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, পরিস্থিতি মারাত্মক বিপজ্জনক ও উদ্বেগজনক। নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সমবেত হওয়ার আগে তিনি আরো বলেছেন, আমরা প্রায় একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছে।প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা নিরসনে কাজ করছে যাতে করে লোকজন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে। অন্যদিকে, পেন্টাগন ঘোষণা করেছে যে তারা সতর্কতার অংশ হিসেবে সেনাদের অতিরিক্ত একটি ছোট দল মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছে।গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গত এক বছর ধরে ইসরায়েল ও হেজবুল্লাহর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত লড়াই চলছে। এতে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে যাদের অধিকাংশই হেজবুল্লাহ যোদ্ধা। এছাড়া উভয় পক্ষে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।হিজবুল্লাহ বলেছে তারা হামাসের সমর্থনে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা তা থামাবে না। দুটি সংগঠনই ইরান সমর্থিত। ইসরায়েল, যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশ তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করে থাকে।ক্রমবর্ধমান সংকটের মধ্যে পেন্টাগন অল্প সংখ্যক সৈন্যদের একটি অতিরিক্ত দল মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছে।মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সতর্কতার অংশ হিসেবে আমরা যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী সদস্যদের একটি ছোট দল ওই অঞ্চলে থাকা আমাদের ফোর্সের কাছে পাঠাচ্ছি, পেন্টাগন মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার সাংবাদিকদের বলেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –