• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘অন্ধ হতে চাই না, সহযোগিতা করুন’, দু’চোখ হারানো ইয়াসিনের আর্তনাদ

প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২৪  

নিয়ম করে রোজ ভোরে বেলা উঠে পূর্ব দিগন্তে। দিনভর পৃথিবী আলোকিত করে গোধূলিতে অস্ত যায়। রাতের আকাশ আলোকিত করে দেখা দেয় চাঁদ। ঘরের উঠোনে কখনো ঝুমঝুম বৃষ্টি কখনো রোদ। শিশু-কিশোরের কোলাহলে জেগে উঠে পাড়া। দূরন্ত শৈশবে কিশোররা যখন খেলাধুলার ছুটোছুটিতে ব্যস্ত তখন দুচোখ বাঁচানোর লড়াইয়ে ইয়াসিন।

ছোটবেলার সময় তার কাছে এখন কেবলই স্মৃতি। পাড়ার মেঠো পথ ধরে ছোটা হয় না আগের মতো। খুব কাছের মানুষ আর জিনিসপত্রও এখন তার কাছে কেবলই শব্দ। দিন-রাত তার কাছে এখন এক। দুচোখ বাঁচানোর জন্য লড়াই করছেন নিয়মিত।

তবে অর্থের অভাবে সেই লড়াইয়ের অসহায় যোদ্ধা তার পরিবার। ধারদেনা করে এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি। আগে এক চোখে কিছুটা দেখতে পেলেও এখন সেই চোখেও নিভে গেছে আলো।

চিকিৎসকরা বলেছেন, ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করালে অন্তত একটি চোখ অপারেশনের মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। তবে দিনমজুর পরিবারটি হেরে যাচ্ছে অর্থের কাছে। তিন বেলার খাবার জোগানই যাদের কষ্টকর তাদের কাছে ছেলের চিকিৎসার জন্য বাড়তি অর্থ কেবলই স্বপ্ন। এমনকি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার মতোও পয়সা কড়ি নেই তাদের কাছে।

ইয়াসিন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের প্রধানপাড়া এলাকার দিনমজুর মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে। ৩ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে ইয়াসিন তৃতীয়। দিনমজুরি করে কোনো মতে চলছিল তাদের সংসার। সম্পদ বলতে বাড়ি ভিটের ৮ শতক জমি।

পাঁচ বছর বয়সে একটি চোখে আঘাত পায় ইয়াসিন। এরপর চিকিৎসায় ভালোও হয়ে যায়। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পেরেছে ইয়াসিন। দুই বছর আগে তার চোখে আবারো সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। প্রথমে বা চোখের আলো নিভে যায়। এক চোখ দিয়েই হাঁটাচলা করছিল ইয়াসিন। কিন্তু এখন দুই চোখের কেবল আঁধার। এর মধ্যে পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন স্থানে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েছেন তারা। সর্বশেষ চক্ষু বিশেষজ্ঞ টি জামান তাদের ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে জরুরিভাবে ভর্তির পরামর্শ দেন।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার একটি চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ঢাকা যাওয়ার টাকাও নেই তাদের কাছে। দিনমজুরি করে যে টাকা পান সেই টাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনবেলা খাবার জোটানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক ঋণ হয়ে হয়ে গেছে পরিবারটির।

ইসলাম বলেন, ‘আমার সম্পদ বলতে বাড়ি ভিটে ছাড়া কিছুই নেই। দিনমজুরি করে কোনো মতে চলে সংসার। তার মধ্যে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অনেকের কাছে ধারদেনা হয়ে গেছে। এখন ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার মতো টাকাও আমার কাছে নেই। মানুষের কথা মতো যে যার কাছে যেতে বলেছে গিয়েছি। চোখ ভালো করার জন্য সত্যপীরের গানও মানত করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’

ইয়াসিনের মা মনসুরা বেগম বলেন, ‘চোখের সামনে ছেলেটার চোখের আলো নিভে যাচ্ছে কিছুই করতে পারছি না। যে বয়সে ওর স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা করার কথা, সে বয়সে বাড়িতে বসে বসে কাটাতে হচ্ছে তাকে।’

ইয়াসিন বলেন, ‘আগে একটি চোখে দেখতে পারতাম এখন কোনো চোখেই দেখতে পাই না। কেবল শব্দ শুনি। আমি অন্ধ হতে চাই না। আপনারা আমাকে একটু সহযোগিতা করুন।’

জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক অনিরুদ্ধ কুমার রায় বলেন, আমরা যে ৬টি রোগের অর্থসহায়তা দিয়ে থাকি তার মধ্যে চোখের রোগ নেই। তবে ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে সমাজসেবা অধিদফতরের সহযোগিতা নিতে পারবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –