• শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ২ ১৪৩১

  • || ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

মিস্টার বিন যেভাবে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৮  

নব্বই দশকের পর থেকে ‘মিস্টার বিন’ দেখে হাসেননি এমন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। প্রায় দুই দশকেরও অধিক সময় ধরে হাসির সিরিজে অভিনয় করে আসছেন এই অভিনেতা।

আসল নাম ‘রোয়ান অ্যাটকিনসন’। আর আমরা তাকে চিনি ‘মিস্টার বিন’ নামে। গোটা বিশ্বকে অসাধারণ হাস্যরসাত্মক কাজ দিয়ে বিনোদন দিয়ে গিয়েছেন এই অভিনেতা। তার এই অসাধারন অভিনয়ের কারণে পুরো পৃথিবী তাকে মনে রাখবে যুগের পর যুগ।

তবে একটি হতাশার খবরও আছে, তা হলো বিগত ২০১১ সালে ‘মিস্টার বিন’এর শেষ সিরিজটি দেখা যায়। এরপর থেকে সবার প্রিয় রোয়ান অ্যাটকিনসন অবসর নেন। জানা গেছে, এরপর থেকে এই সিরিজে আর সরব হবেন না তিনি।

তারপর থেকে প্রায় মানুষের চোখের আড়ালে চলে যান বিনোদনের এই অভিনেতা। এরপর থেকে টিভির পর্দায় তাকে একদমই দেখা যায় না বললে চলে। তবে নেই বলে কী মিস্টার বিনকে কারোর মনে পরে না আর? কেমন আছেন তিনি? কি করছেন এখন? অভিনয় কি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি?

কারোর মনে যদি এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, তবে তাদের জন্যই এই লেখা। চলুন দেখে আশা যাক ছোট্ট করে তার সম্পর্কে।

রোয়ান অ্যাটকিনসন যে শুধুমাত্র একজন কৌতুকাভিনেতা নন, এছাড়াও তিনি একাধারে একজন প্রকৌশলী, লেখক এবং চলচিত্র অভিনেতা এ সম্পর্কে হয়ত অনেকেরই জানা নেই। ছোটবেলা থেকেই হাসিখুশি স্বভাবের এই অভিনেতা খুব কম কথা বলতেন। তার জন্ম ইংল্যান্ডের উত্তরপূর্বাঞ্চলের ডুরহ্যাম শহরে। বেড়ে ওঠাও সেখানে।

তিনি নাকি ছোটবেলা থেকেই অভিনয় ভালবাসতেন। তাছাড়া পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী ছিলেন এই অভিনেতা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন রোয়ান অ্যাটকিনসন। এরই মধ্যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ই তার পরিচয় হয় নাট্যকার ও গীতিনাট্য অভিনেতা রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে।

তারপর থেকেই শুরু হয় তাদের পরিকল্পনা। এরপর রিচার্ড কার্টিস ও রোয়ান অ্যাটকিনসন দু’জন মিলে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলেন ‘অক্সফোর্ড নাট্যশালা’। এই সময়ে মিস্টার বিন তার অভিনীত সিরিজ ও সিনেমাগুলোর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেলেও, সেই জনপ্রিয়তার শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৯ সালে, তার হাস্যরসাত্মক বই লিখে।

বিনের লেখা দুইটি বই ওইসময় এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে সেগুলোর সঙ্গে বেস্ট সেলিং এর নামটা জুড়ে গিয়েছিল। এমনকি সেই বইয়ের জন্য তিনি ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও ইন্টারন্যাশনাল এমি অ্যাওয়ার্ডের মত সন্মানজনক পুরস্কারও পেয়েছিলেন।

১৯৯০ সালে প্রথমবারের মত ‘মিস্টার বিন’ নিয়ে টিভির পর্দায় হাজির হন রোয়ান অ্যাটকিনসন। তার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল ‘মিস্টার বিন’ সিরিজটি। হাস্যরসাত্মক এই টিভি সিরিজে তার খ্যাতি ব্রিটেনের সীমা পার করে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।

মিস্টার বিনের নাম সবার মুখে মুখে হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই রোয়ান অ্যাটকিনসন তার ‘মিস্টার বিন’ চরিত্রটি দিয়ে ভক্তদের মনে জায়গা করে নেন। তারপর থেকে জনপ্রিয় এই টিভি সিরিজ ‘মিস্টার বিন’ প্রায় দুই যুগ ব্যাপী মাতিয়ে রাখেন পুরো বিশ্বকে।

তাছাড়া বিনোদন ও কৌতুকপ্রিয় মানুষদেরকে এর থেকে দীর্ঘসময় যাবৎ বেশি বিনোদন আর কোন টিভি সিরিজ দিতে পেরেছে বলে জানা নেই। এরই মধ্যে, ২০১৬ সালে হঠাৎ একবার গুজব ছড়ায় যে মিস্টার বিন মারা গেছেন। অনেক বছর ধরে নাকি ডিপ্রেশনে ভুগে নিজের জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন তিনি। আত্মহত্যা করেছেন নাকি তিনি!

এরপর আরো একবার ২০১৭ সালে মার্চে আবারো গুজব ছড়িয়ে পড়ে তার মৃত্যুর। এছাড়াও একবার এমনও শোনা যায় যে, পাগল হয়ে গেছেন মিস্টার বিন! এই ধরণের গুজব কারা ছড়িয়েছেন, সেটা নির্দিষ্ট ভাবে জানা না গেলেও এসব সব কিছু গুজব ছিল জেনে বেশ খুশি ও সস্তির নিঃশ্বাস নেন মিস্টার বিনের ভক্তরা।

রোয়ান এর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যানা গেছে, তার প্রথম সুনেত্রা শাস্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর লুইস ফোর্ডের প্রেমে পড়েন তিনি। এরপর থেকে তারা উত্তর লন্ডনে প্রায় ৪৬ লাখ পাউন্ড ব্যয়ে নির্মিত কটেজে একসঙ্গেই থাকেন। গেল বছর নাকি একটা সন্তানও হয়েছে এই জুটির। তারা বিয়ে না করলেও, লুইস ফোর্ডের সঙ্গে বেশ সুখেই আছেন রোয়ান অ্যাটকিনসন। এমনটি শোনা যায়।

এদিকে, মিস্টার বিন তার চরিত্রটি থেকে অবসর নিলেও টিভির পর্দায় তাকে মাঝে মধ্যে দেখা যায়। গত ২০১৬ সালে ব্রিটেনের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ‘মেইগ্রেট সেটস ট্রাপ’ নামক মুভির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় রোয়ান অ্যাটকিনসনকে।

এদিকে, ২০০৩ সালে মিস্টার বিন বা রোয়ান অ্যাটকিনসনকে যুক্তরাজ্যের একজন কিংবদন্তী কৌতুকাভিনেতা বলে বিবেচনা করা হয়। সেই সময় প্রথমবারের মত তাকে যুক্তরাজ্যের কিংবদন্তী ৫০ কৌতুকাভিনেতার লিস্টে অন্তর্ভূক্ত করে ‘ব্রিটেনের দ্য অবজারভার’ নামে এক পত্রিকায়।

এছাড়াও ২০০৫ সালে ব্রিটেনের এক ‘চ্যানেল ফোর’ এর জরিপে ব্রিটেনের সর্বকালের সেরা ৫০ কমেডিয়ানদের লিস্টে ২৪ তম স্থানে ঠাঁই পেয়েছেন তিনি। এরপর ২০১৩ সালে ব্রিটেনের রাণীর পক্ষ থেকে সন্মানজনক ‘কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব ব্রিটিশ এমপায়ার’ খেতাবেও দেয়া হয় তাকে।

তবে এত কিছুর পরেও মিস্টার বিনের কাছে ভক্তদের প্রত্যাশার যেন শেষ নেই। আরো একবার কী মিস্টার বিন হয়ে তিনি ফিরে আসবেন? আবারো কোন মজার চরিত্র কী করবেন? এসব প্রত্যাশা করেন ভক্তরা।

এখনো এমন অনেক প্রশ্ন হয়তো ভক্তদের মধ্যে ঘুরে মিস্টার বিনকে নিয়ে। কিন্তু সেগুলোর উত্তর কেবল সময়ই দিতে পারবে। আমরা বরং সেই পর্যন্ত ‘মিস্টার বিন’ নিয়েই থাকি, আর হাসতে হাসতে উপভোগ করতে থাকি তার পুরনো মজার চরিত্রগুলো।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –