• বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৮ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

ধীরে ধীরে কাটছে ডলার সংকট

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২৪  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে অনেকটা প্রকাশ্যেই ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নেন প্রবাসীরা। আরব আমিরাত, ইতালি, আমেরিকাসহ অনেক দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীরা ছাত্রদের পক্ষে বড় ভূমিকা পালন করেন। তখনকার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে প্রবাসীরা ‘নো রেমিট্যান্স’ প্রচারণা শুরু করেন। এর পরিপেক্ষিতে গত জুলাইয়ে ১০ মাসের মধ্যে রেমিট্যান্স সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে। গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর পর থেকেই রেমিট্যান্সের পালে নতুন হাওয়া বইতে শুরু করে। আগস্টের প্রথম তিনদিনে সাড়ে ৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। পরের সাতদিনে এসেছে প্রায় ৩৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। এতে করে দেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দামও কমতে শুরু করেছে। 

দেশের খোলাবাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৯-১২১ টাকার মধ্যে। ক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহে ডলার কিনতে এসে দেখা যায় টাকার বিপরীতে এক ডলারের দাম ১২৬ টাকা। তবে এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১১৮ টাকায়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিট্যান্সের মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠালে অর্থপাচার কমার পাশাপাশি নগদ ডলার কিনে রাখার প্রবণতা কমে যাবে, সুফল মিলবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে।

ব্যাংকাররা বলছেন, নতুন সরকারের প্রতি সাধারণ জনগণের পাশাপাশি প্রবাসীদের আস্থা বেশি। প্রবাসীদের আস্থার কারণে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতাও বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে- সামনের দিনগুলোতে প্রবাসী আয় আরো বাড়বে। এত করে দেশের ডলার সংকট কেটে যাবে।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আসাদুল নামে এক প্রবাসী বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচার সরকারের পতনের জন্য বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে ছিলাম। শেখ হাসিনার সরকার পতনে আমরা খুশি। এখন থেকে আমরা নিয়মিত বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোমানিয়ার এক প্রবাসী বলেন, ‘বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আমরা প্রবাসীরা নতুন সরকারের অধীনে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে নিজে এবং অন্যকে উৎসাহিত করবো।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে- গত জুলাই মাসের শেষ ১১ দিনে মাত্র ৩৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। সরকার পতনের পর ৭ থেকে ১০ আগস্ট রেমিট্যান্স আসে ৩৮৭.১২ মিলিয়ন ডলার। সবমিলে চলতি আগস্টের প্রথম ১০ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৮২.৭৭ মিলিয়ন ডলার।

গত জুলাই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা দেশে পাঠান ১৯১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ কোটি ডলার কম এবং গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দর ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। এখন এটা বাড়তে শুরু করেছে। রেমিট্যান্স কমে গেলে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভের চাপ কমাতে বেশি দামে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০টির মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার রেট ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা অফার করে।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকা, আগের সরকারের প্রতি প্রবাসীদের অনাস্থায় রেমিট্যান্স কমে যায়। তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন সরকারের প্রতিশ্রুতিতে তারা আস্থা রাখছেন। এখন প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।

অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, দেশে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করায় নগদ ডলার কিনে রাখার প্রবণতা কমছে। সেইসঙ্গে অর্থপাচার রোধ করা গেলে মুদ্রাবাজারে স্বস্তি বাড়বে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –