• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বেকার নারীদের পথ দেখাচ্ছেন পঞ্চগড়ের এমি

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২৪  

হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ভাড়া বাড়ির শয়ন কক্ষের কোণে নারীদের বিভিন্ন ডিজাইন ও রকমারি পোশাক বিক্রি ও হস্তশিল্পের কাজ করে স্বাবলম্বী ও সফল হয়েছেন এমি আক্তার এমি ৷ শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, প্রায় অর্ধ শতাধিক গরিব, অসহায় ও দরিদ্র নারীদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থানও৷ ফলে এলাকায় বেকার নারীদের আলোর পথ দেখাচ্ছেন তিনি৷

সফল এই নারী উদ্যোক্তা এমি আক্তারের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার। এমি আক্তার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভজনপুর এলাকায় ভাড়া বাড়ি বসবাস করলেও তার স্বামী বাড়ি দেবীগঞ্জ উপজেলার কাঁচারীপাড়ায়৷ এমি আক্তার স্বামী বদরুদ্দোহা প্রধান জাহাঙ্গীর পেশায় একজন পাথর ব্যবসায়ী। তাদের ঘরে এক মেয়ে রয়েছে সে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে এবং তার মেয়ের নামেই প্রতিষ্ঠিত করেন স্নেহা ফ্যাশন অ্যান্ড বুটিক হাউজ৷

এমি আক্তার অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে তিনি ২০২১ সালে তেঁতুলিয়া উপজেলা, জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে হয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতা। এমি আক্তারের সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে স্থানীয় নারীরাও৷ বেকার নারীদের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণেও ট্রেইনার হিসেবে কাজ করে থাকেন তিনি৷  

জানা যায়, এমি আক্তারের স্বামী বদরুদ্দোহা প্রধান জাহাঙ্গীর ২০১০ সালে ব্যবসায়িক কাজে দেবীগঞ্জ থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর (দেবনগড়) কলেজ পাড়া এলাকায় এসে ভাড়া বাড়িতে উঠেন৷ সেখানে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তাদের সংসার৷ তবে স্বামী ব্যবসার কাজে সারাদিন বাইরে থাকলেও মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়িতে বেকার সময় পার করতেন। তবে তিনি ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করার।

সেই স্বপ্ন আর বেকারত্ব থেকে বেড়িয়ে আসতে ২০১৪ সালে  নিজের জমানো ৩০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন তার ব্যবসা, ভাড়া বাসার শোবার কক্ষেই খুলে বসেন ছোট্ট কাপড়ের শো-রুম। নামও দেন মেয়ের নামে স্নেহা ফ্যাশন ও বুটিক হাউজ। প্রথমে তিনি ঢাকায় এক আত্মীয়য়ের সহযোগিতায় নারীদের  বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে আসেন। এভাবে ধীরে ধীরে চলতে থাকে তার ব্যবসা৷ এভাবে কয়েক বছরে নারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে তার শো-রুমটি৷

এদিকে এমি আক্তার কাপড়েই সফল হয়ে থেমে থাকেনি। নিজের চেষ্টায় আয়ত্ব করেন নকশী কাঁথাসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ পাশাপাশি তৈরি করা শুরু করেন বিভিন্ন আঁচার৷ এভাবে তার হাতের তৈরি নকশী কাঁথা বিক্রি চলতেই থাকে। পরবর্তীতে তার ব্যবসা অফলাইনের পাশাপাশি  অনলাইনেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে৷

এমি আক্তার নিজের আয়ের পথ তৈরির পর শুরু করেন এলাকার গরিব ও বেকার নারীদের নিয়ে কাজ করা। ভাড়া, বাড়িতে স্থান সংকলন না থাকায় জেলা শহরের নিমনগর এলাকায় বাবার বাড়িতে নকশীকাঁথার কাজ শেখান নারীদের৷ পাশাপাশি বিভিন্ন পোশাকে কারচুপির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নারীরা৷ 

সরজমিনে দেখা যায়, এমি আক্তারের বাড়িতে শো-রুমে দিনভর সমাগম ঘরে নারী ক্রেতাদের। এমিও আক্তারও অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি করেন পোশাক৷ এছাড়া  নারীরা নকশীকাঁথা, থ্রি-পিস, শাড়ি, চাদর  ও পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাকে নকশার কাজ করেন। অনেক নারী আবার নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কারচুপির কাজ করেন। এভাবে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী কাজ করছেন। আর এসব নকশার ডিজাইন করে দেন এমি আক্তার এমি নিজেই।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –