• রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৭ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগুনে পুড়ে যাওয়া নানাবাড়ি দেখতে এসে প্রাণ গেল নাতনির

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩  

৫২ বছর বয়সী সৈয়দ আলী। এক সময় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতেন, থাকতেন মানুষের বাড়িতে। এভাবেই চলতো তার জীবন সংগ্রাম। ছেলে-মেয়েদের কষ্ট করে মানুষ করে দিয়েছেন বিয়ে। তবে সেই সৈয়দ আলীর জীবনের মোড় হঠাৎ পাল্টে গেল। সরকার ভূমিহীন ও গৃহীনদের ঘর দেন এমন খবর পেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি পান একটি পাকা ঘর। সেই ঘরে তার সুখের জীবন কাটতে থাকে। 

এদিকে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই হাট ইউনিয়নের ধামনাগছ এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের পাওয়া সৈয়দ আলীর ঘরে হঠাৎ ঘটে অগ্নিকাণ্ড। এতে ঘরের আসবাপত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পুড়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিভে যায় তবে ততক্ষণে সব শেষ হয়ে যায়। পরে খবরে পেয়ে দেখতে আসেন তার প্রতিবেশী ও স্বজনরা। সেসময় দেখতে আসেন তার মেয়ে, মেয়ে জামাই ও নাতি-নাতনিও৷ 

তবে ঘটনার একদিন পর শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কের ধামনাগছ এলাকায় সৈয়দ আলীকে দেখতে আসা ছোট নাতনি মীম রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকের (লড়ি) ধাক্কায় মারা যায়। এতে দুই পরিবারের চলছে শোকের মাতম।

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সৈয়দ আলীর নাতনির হঠাৎ খবর পেয়ে ছুটে যান তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী। পরে তিনি দুই পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা, বস্ত্র ও শুকনো খাবার তুলে দেন। সৈয়দ আলী যেন আবারো তার ঘরে উঠতে পারেন তার ব্যবস্থার কথা জানান ইউএনও। 

এ বিষয়ে সৈয়দ আলী জানান, আমি গরিব মানুষ। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতাম। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের দেওয়া উপহারের ঘরে বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু গতকাল হঠাৎ সেই ঘরে আগুন লেগে যায়। আমাকে দেখতে এসে আমার নাতনিও আজ সড়ক পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মারা গেল। আমরা এত কষ্ট নিয়ে কেমন থাকবো জানি না। তবে কারো জীবনে এমন দিন যেন না আসে। যারা আমাদের পাশে রয়েছে তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। 

মৃত মীমের বাবা আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, আমার মেয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। সবাই আমার মেয়ে ও পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। যারা আমাদের খোঁজ খবর নিয়ে পাশে রয়েছে সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। 

বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক হোসেন বলেন, খবর পাওয়া মাত্রই মৃত শিশুর বাড়িতে গিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে। 

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, সৈয়দ আলীর পরিবারের এমন ঘটনা শুনে আমি তাদের বাড়িতে যাই। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতার পাশাপাশি কাপড় ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়। আমরা এই দুই পরিবারের পাশে রয়েছি। সৈয়দ আলী যেন আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারেন এ জন্য আমরা তার পাশে থাকব। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –