• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিনমজুর থেকে বিসিএস ক্যাডার

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

কখনো দিনমজুর, কখনো সিকিউরিটি গার্ডসহ নানা পেশায় কাজ করেও বিসিএস জয় করেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের মো. জিয়াউর রহমান। দারিদ্র্যের শত কষাঘাতেও লেখাপড়ার হাল ছাড়েননি তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করে ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন জিয়াউর রহমান। তার সাফল্যে খুশি পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান জিয়াউর রহমান বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন- এমন খবরে তার বাড়িতে ভিড় লেগেই আছে। প্রতিদিনই তাকে দেখতে আসছেন প্রতিবেশীসহ দূর-দূরান্তের মানুষ।

উলিপুরের ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের দালালীপাড়া গ্রামে জরাজীর্ণ বাড়ি জিয়াউর রহমানের। বাবা অসুস্থ থাকায় ছোটবেলা থেকে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সংসারের হাল। জমিতে ধান কাটাসহ যেকোনো কাজ করে পাওয়া অর্থে সংসার চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং ২০১২ সালে দাখিল ও ২০১৪ সালে আলিম পাশ করেন তিনি।

পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার আশায় ঢাকায় গিয়ে চাকরি করেন সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে। কাজ করেন কারখানাতেও। এমনকি টাইলস মিস্ত্রির কাজও করতে হয়েছে তাকে। এরপর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেন তিনি। ৪১তম বিসিএস এ প্রথম পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হন জিয়াউর রহমান।

জিয়াউর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমাকে অন্যের জমিতে ধানকাটার মজুরি দিতে হয়েছে। ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজও করতে হয়েছে। এমনও সময় গেছে হাতে টাকা নেই। কিন্তু লেখাপড়ার খরচ, বাড়িতে টাকা পাঠানোসহ চাকরির আবেদন করার প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু উপায় ছিল না। আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় সংসারেরও অভাব অনটন ছিল। সব মিলিয়ে আমি হাল ছাড়িনি। স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষকরাও আমাকে সহায়তা করেছেন।

জিয়াউর রহমানের মা জোলেখা বেগম বলেন, আমাদের অভাবের সংসার থেকে ছেলেকে কিছুই দিতে পারিনি। বরং ছেলেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে সংসারের খরচ চালাতো। ছেলের জন্য দোয়া আছে।

জিয়াউর রহমানের বাবা ছকিয়ত আলী বলেন, বাড়ির তিন শতক জমি ছাড়া আমার আর কিছু নেই। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হয়। জিয়াউরের মা অন্যের বাড়িতে কাজও করেছে। এই পরিবার থেকে ছেলের জন্য কিছু দেওয়া সম্ভব হয়নি। বরং ছেলেই আমাদের দিয়েছে। ছেলে বড় চাকরি পেয়েছে এতে আমি খুশি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –