• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

উলিপুরে নববধূ রিংকির শরীরে হত্যাকারীর বিকৃত ‘ক্ষোভের’ চিহ্ন      

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২৩  

        
রাতের আঁধারে ঘরে ঢুকে নববধূ রিংকিকে হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। হত্যাকাণ্ডের তিন দিনেও শনাক্ত হয়নি খুনী। ‘প্রতিশোধ স্পৃহা’ কিংবা ‘ক্ষোভ’ থেকে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে ধারণা পুলিশের। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিন তরুণরেক আটক করা হয়েছে। তবে সুরতহাল প্রতিবেদনে নববধূকে ধর্ষণের কোনো আলামত পায়নি পুলিশ। 

ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের উলিপুরের পান্ডুল ইউনিয়নে। গত ১৩ আগস্ট সকালে বাবার বাড়ির ঘর থেকে নববধূ রোকাইয়া আক্তার রিংকি নামে ওই গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রিংকি ওই গ্রামের এনজিওকর্মী রেজাউল করিমের মেয়ে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর ঘর থেকে নিহতের হাতে লেখা ডায়েরি, কয়েকটি চিঠি ও মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ। নিহত রিংকি কারও ব্যর্থ ও অপূর্ণ প্রেম থেকে ‘ক্ষোভের’ বলি হয়েছেন কিনা সে দিকও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

রিংকির মরদেহের গোসল করানো নারীদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, রিংকির গলা কেটেই ক্ষান্ত হয়নি, সারা শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অন্তত ১৭টি আঘাত করেছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় রিংকি হয়তো চিৎকার করেছিলেন। কিন্তু ভারী বৃষ্টির কারণে সে শব্দ কারো কানে পৌঁছায়নি।

রিংকির প্রতিবেশী সাদেক বলেন, রিংকির শরীরে করা প্রতিটি আঘাতই বলে দেয়, রিংকির প্রতি হত্যাকারীর ভীষণ ক্ষোভ ছিল। কিন্তু কার এত ক্ষোভ ছিল, কেনই-বা এভাবে মেয়েটিকে হত্যা করলো। তার কোনো কিনারা আমরা এখনো পাচ্ছি না।

জানা গেছে, শনিবার রাতভর ভারী বৃষ্টি চলছিল। রাতের খাওয়া শেষে বাড়ির দক্ষিণ প্রান্তের সেমিপাকা ঘরে একাই ঘুমাতে যান রিংকি। সেদিন বাড়িতে তার বাবা-মা ছিলেন না। তার দাদা-দাদি ও ছোট ভাই বাড়ির অন্য ঘরে শুয়ে ছিলেন। রিংকি যে ঘরে ছিলেন সেই ঘরের সঙ্গে বাথরুম সংযুক্ত। বাথরুমটিতে ঘরের ভেতর ও বাইরে থেকে প্রবেশের দরজা রয়েছে।  

রাতে ভারী বৃষ্টির মধ্যে কোনো এক সময় দক্ষিণ প্রান্তের সীমানার টিনের বেড়ার বাঁধন খুলে বাড়িতে প্রবেশ করে হত্যাকারী। পরে বাথরুমের বাইরের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। এরপর রিংকিকে বিছানার ওপর নৃশংসভাবে হত্যা করে একই পথে বেরিয়ে যায় হত্যাকারী। তবে হত্যাকারী আগে থেকে রুমে ঢুকে ছিল নাকি পরে ঢুকে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আসাদুজ্জামান আসিফ, রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও মারুফ নামে তিন তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। জব্দকৃত ডায়েরি ও চিঠি এবং প্রাথমিক অনুসন্ধান থেকে তাদের নাম জানতে পারে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, এই তরুণদের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকে যোগাযোগ ছিল নিহত নববধূর। 

এ ঘটনায় রাকিবুলকে এলাকা থেকে, আসাদুজ্জামান আসিফকে রংপুর এবং মারুফকে ঢাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয় পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে পুলিশ মনে করছে, এই তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রিংকির। এর মধ্যে আসিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি রিংকির পরিবার জানতো। নিহতের বাড়িতে আসিফের যাতায়াত ছিল। তাদের বিয়ের আলাপও হয়েছিল। তবে আসিফের পরিবার রাজি না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। 

ওসি গোলাম মর্তুজা বলেন, এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের বাবা। হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন তরুণকে আটক করা হয়েছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –