• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৩০ বছর ধরে গান গেয়ে আচার বেচেন চিংটু

প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২৩  

 
খালি গলায় তোলেন গানের সুর, আচারের ডালা নিয়ে করেন ঘুরঘুর। শহরের অলিগলি সবখানেই তার পদচারণা। শিশু-কিশোর থেকে নারী-পুরুষ সবার কাছেই চেনা। বলছিলাম আচার বিক্রেতা আলতাফ হোসেন চিংটুর কথা। ৩০ বছর ধরে মন মাতানো গানের তালে তালে নানা রকম আচার বেচে দিনাতিপাত করছেন। এলাকার মানুষের কাছে চিংটু নামেই পরিচিত তিনি।  

৫৬ বছর বয়সী চিংটুর বাড়ি রংপুর নগরের মডার্ন এলাকায়। প্রতিদিন সকাল হলেই মজাদার আচারের পরসা নিয়ে বের হন তিনি। ছন্দে আনন্দে গানের সুরে আচার বিক্রি করেন রেলস্টেশন, মুসলিমপাড়া, আদর্শপাড়া, শাপলা চত্বর, হাজীপাড়া, খামার মোড়, কলেজপাড়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। নিজের হাতে তৈরি তেঁতুল, বড়ইসহ বিভিন্ন ফলের আচার এবং আমসত্ত্ব ডালিতে সাজিয়ে মাথায় নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি।

চিংটুর আচারের গ্রাহক ও জনপ্রিয়তা তুঙে। তার আচারের ঘ্রাণ আর স্বরচিত গানের মুর্চনায় ছুটে আসেন শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী মানুষ। হ্যামেলনের বাঁশিওয়ালার মতো তার পিছু নেন বিনোদন প্রিয় শিশুরা।

নগরীর স্টেশন এলাকায় স্কুলপড়ুয়া রাবেয়া বিনতে নেহা জানায়, কয়েক বছর ধরে সে চিংটুর কাছে আচার কেনে। গানের সুর শুনলেই বাড়ি থেকে বের হয়। তার মতো এলাকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ও শিশুরা আচার খেতে পছন্দ করে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন গ্রামে ফেরি করে আচার বিক্রি করতে দেখা যায়।  

হাজীপাড়া এলাকার দুই বোন মারুফা আক্তার ও মাসুমা আক্তার। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আলতাফ হোসেন চিংটুর আচার খেয়ে আসছেন তারা। কখনো আবার পছন্দের তালিকার আচার মিললে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কিনে নেন। এই  প্রতিবেদককে তারা বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই তার আচারের ভক্ত। স্কুল-কলেজে আচার খেলেও আমাদের কাছে চিংটু ভাইয়ের ঘরোয়াভাবে তৈরি করা আচারের স্বাদটা ভিন্ন রকম।

শুধু মেয়েরা নয় চিংটুর আচারের ভক্ত ছেলেরাও। সেই কথাই বলছিলেন লালবাগ কলেজপাড়া এলাকার সঞ্জয় রায়। প্রায়ই চিংটুর কাছ থেকে আচার নেন কলেজপড়ুয়া এই শিক্ষার্থী। তার বন্ধু-বান্ধবীরাও চিংটুর স্বরচিত গান আর আচারের ভক্ত বনে গেছেন।

সঞ্জয় রায় বলেন, আমরা যখনই মামার (চিংটু) গানের সুর শুনি বুঝতে পারি উনি এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে হোস্টেলের বাহিরে বের হয়ে তার কাছ থেকে আচার কিনি। উনার গানের মধ্যে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি আচারের স্বাদটাও ভিন্ন। বয়স বাড়লেও চিংটু মামার মনোবল কমেনি। এখন প্রায়ই আমাদের এলাকায় আচার ফেরি করতে আসেন।

এদিকে আলতাফ হোসেন চিংটু জানান, ঘরোয়া এই সুস্বাদু আচারের চাহিদা এতোটাই বেশি এবং জনপ্রিয় দৈনিক চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় পুরো আচার বিক্রি হয়ে যায়। এ ব্যবসা থেকে তার প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। বিশেষ করে দুই ঈদ ও পূজার সময় তার বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। শুধু আচার নয় তার গান শুনতেও ছুটে আসেন অনেকে।

বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আলতাফের সংসার। আচার বিক্রি করেই পরিবারের ভরণপোষণ করেন। জীবিকার তাগিদে আচার নিয়ে গানে গানে ছুটে যান মানুষের দ্বারে দ্বারে। কাজের ফাঁকে কথা হয় আলতাফের সঙ্গে।


আলতাফ হোসেন চিংটু বলেন, গান শুনতে সবাই ভালোবাসে। তাই আমরা পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে নিজের ইচ্ছে মতো চার লাইন, ছয় লাইনের একটা করে গান গেয়ে থাকি। এসব গান ও  সুর আমার নিজের করা। অনেকে গান শুনে আচার কেনেন। আবার কেউ কেউ আচারের ভক্ত বলেই আমাকে খোঁজেন।

আচার বিক্রেতা ৩০ বছর ধরে জীবন-জীবিকার তাগিদে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে নানা রকম আচার বিক্রি করে সংসারের ঘানি টানছেন আলতাফ। সামান্য পুঁজি আর গায়ের শ্রমই তার ব্যবসার মূল চালিকা শক্তি। অনেক স্বপ্ন থাকলেও পূরণের সাধ্য নেই তার। মানুষের ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান আলতাফ হোসেন চিংটু।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) রংপুর জেলা সভাপতি মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বেকারত্ব দূরীকরণসহ সাধারণ মানুষের কাছে আলতাফ হোসেনের মতো মানুষেরা অনুপ্রেরণা। সামান্য পুঁজিতে এ ধরণের ব্যবসা চালিয়ে আসা মানুষদের জন্য ব্যাংকগুলোতে ঋণ সহায়তা সুবিধা সহজ করা প্রয়োজন।  

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –