• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বদরগঞ্জে গোপন বিয়ে, স্ত্রীর মর্যাদা নিতে এসে দেখা মিলল সতীনের

প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২৩  

 
প্রেমের পর গোপনে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদার দাবি নিয়ে রংপুরের বদরগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখলেন স্বামীর নতুন বউ। এ ঘটনায় হতবিহব্বল হয়ে পড়েন আঁখি আখতার আনু (১৭) নামের ওই কিশোরী বধূ। তার দাবি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। গতকাল বুধবার (৯ আগস্ট) বিকেলে রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরশহরের কলেজপাড়ায় এঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, গৃহবধূ আঁখি ঢাকা থেকে বাসযোগে বদরগঞ্জ পৌরশহরের কলেজপাড়ায় মোকতার আলমের ছেলে গার্মেন্টস কর্মী স্বামী রোস্তম আলীর বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। তবে সেখানে তার ঠাঁই মেলেনি। বাড়ির লোকজন তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করলে তিনি পাশেই রোস্তমের নানা আলহাজ আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে ওঠেন। ঢাকায় স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে স্ত্রীর মর্যাদার জন্য বদরগঞ্জে আসেন বলে জানান তিনি।

কিন্তু স্বামী রোস্তম আলীর পরিবার ওই মেয়েকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ গত তিন মাস আগে রোস্তম আলী আরেক মেয়েকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করে বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যান।

রোস্তম আলী ঢাকার আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় অবস্থিত এলাইন্স কম্পোজিট লিমিটেডের নামের একটি গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করেন। আঁখি আখতারও একটি গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করেন। আঁখির বাড়ি জয়পুরহাট জেলা সদরের দেউর এলাকায়। ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করার সুবাদে দু’জনের পরিচয় সূত্রে প্রায় দেড় বছর আগে বিয়ে হয় বলে দাবি করেন আঁখি।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আঁখি আখতার আনুর সঙ্গে রোস্তম আলীর মৌলভী দিয়ে গত দেড় বছর আগে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় গোপনে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর তারা আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় সংসার শুরু করেন। এরমধ্যে গত তিন মাস আগে রোস্তম আলী বাড়ি বেড়াতে এসে ধুমধাম করে বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের বাওচণ্ডি এলাকার শফিউল্লার মেয়ে সুখী মনিকে বিয়ে করেন। পরে তিনি নতুন বধূকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় কাজে যোগদান করেন।

এদিকে আঁখি আখতার তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। রোস্তম দ্বিতীয় বিয়ের কথা গোপন করে আঁখি আখতারের কাছে। এরমধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য বিষয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তার ওপর নামে অহেতুক নির্যাতন। এসব অত্যাচার সইতে না পেরে গোপনে ঢাকা থেকে বুধবার বদরগঞ্জে আসেন আঁখি আখতার। এসময় তাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টার করা হয় বলে দাবি করেন আঁখি আখতার। ঘটনাটি জানাজানি হলে আশপাশের লোকজন কলেজপাড়ায় রোস্তমের বাড়িতে ভিড় করেন।

রোস্তমের বাবা মোকতার আলম বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি মেয়েটি। ছেলের বউ হিসেবে তাকে কিভাবে মেনে নেই। তার পরও ছেলেকে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসতে বলা হয়েছে। এর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আঁখি আখতার সাংবাদিকদের বলেন, গার্মেন্টে একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে রোস্তমের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে আমরা গোপনে মৌলভী দিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করি। আমার পেটে রোস্তমের তিন মাসের সন্তান আছে। সে ইদানিং আমার ক্ষিপ্ত হয়ে টর্চার করতে থাকে। স্বামীর আসল পরিচয় জানার জন্য ওকে না জানিয়ে ঢাকা থেকে শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখি বাড়িতে ওর আরেকটা নতুন বউ। দ্বিতীয় বিয়ের কথা সে গোপন রেখেছিল। দুই স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে চাইলে আমার কোন আপত্তি নেই।

এদিকে ঘটনার সত্যতা জানতে রোস্তমের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বদরগঞ্জ পৌরশহরের ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোকছেদুল হক বলেন, ঘটনাটি আমার আগে জানা ছিল না। মেয়েটি আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ছেলেটি বর্তমানে বাড়িতে নেই। সে ঢাকায় থাকে। বিষয়টি জানার জন্য পুলিশের একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেয়েটি চাইলে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –