• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফরের পর উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে তৃণমূল

প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০২৩  

 
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর সফরের পর উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে তৃণমূল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় প্রধানের এ সফর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন রংপুর অঞ্চলের উন্নয়ন ও আগামীতে আরও উন্নয়নের আশ্বাসে সাধারণ মানুষও উজ্জীবিত বলে মনে করছেন তারা।

বিশেষ করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও বন্ধ হয়ে যাওয়া রংপুরের একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্যামপুর চিনিকল চালুর আশ্বাসে আশার আলো দেখছেন এ এলাকার মানুষ। এরই মধ্যে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাত দিনব্যাপী আনন্দ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। শ্যামপুর চিনিকল পুনরায় চালুর আশ্বাস দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের নেতারা।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভাগীয় নগরীতে একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন চালু, অর্থনৈতিক জোন তৈরি, কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী স্থাপন, আইটি পার্ক, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণ এখন সময়ের দাবি। জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে হলেও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে এসবের বিকল্প নেই।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার রংপুর বিভাগ ও সিটি করপোরেশন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও মেট্রোপলিটন পুলিশ, রংপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ও পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমি, আদালতের বহুতল ভবন, আধুনিক পুলিশ লাইনস নির্মাণ, ১৭ তলাবিশিষ্ট ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণ, আধুনিক জেলা শিক্ষকলা একাডেমি, ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, এম এ ওয়াজেদ মিয়া হাইটেক পার্ক, পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ, এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়কের ছয় লেনে উন্নীতকরণ, গঙ্গাচড়ায় মহিপুরে ‘শেখ হাসিনা সেতু’, মডেল মসজিদ নির্মাণসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর সফরে এসে রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের জলাবদ্ধতা নিরসন শীর্ষক প্রকল্প, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, পালিচড়া স্টেডিয়াম, নলেয়া নদী পুনঃখনন, আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন, পীরগাছা চৌধুরানী জিসি থেকে শঠিবাড়ি আরএইডি ৫৭৯ মিটার সড়ক (পীরগাছা অংশ), পীরগঞ্জ ভেন্ডাবাড়ি থেকে খালাশপীর জিসি সড়ক পুনর্নির্মাণ, কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর জিসি থেকে পাওটানা জিসি ভায়া ভায়ারহাট সড়ক পুনর্নির্মাণ, মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট-পীরগাছা ভায়া বালারহাট সড়কের গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর ওপর ৯৬ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট জিসি-কাকিনা আরএইডি সড়কে ৪০ মিটার আরসিসি ভেরিয়েবল ডেপথ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কাউনিয়া উপজেলায় তিনতলা পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম ফ্লাড শেল্টার নির্মাণ, রংপুর মেডিকেল কলেজ মাল্টিপারপাস ভবন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় ভবন, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যা বেগম রোকেয়া মডার্ন হাসপাতাল, হেলেঞ্চা ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নে ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, খালাশপীরে ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, মাদারগঞ্জে ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রাসফন্ট প্ল্যান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড নির্মাণ, ভারারদহ বিল, পাটোয়া কামরী বিল পুনঃখনন, চিতলী বিল পুনঃখনন, রংপুর সিটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নৈমুন্না বিল পুনঃখননের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ, রংপর জেলায় বিটাক কেন্দ্র স্থাপন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস ভবন এবং লেডিস হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারপ্রধান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজ দায়িত্বে এ এঞ্চলের উন্নয়ন করেছেন। তবে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় রংপুর এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে। রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা, মডার্ন মোড় থেকে পাগলাপীর পর্যন্ত বাইপাস মহাসড়ক নির্মাণ, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষিভিত্তিক রপ্তানিনির্ভর কলকারখানা নির্মাণ, রংপুর-কক্সবাজার আন্তঃনগর ট্রেন চালু ও অর্থনৈতিক জোন তৈরি এখন সময়ের দাবি।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বন্ধ হয়ে যাওয়া চিনিকল চালু, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন তাই আমরা বিশ্বাস করি তা আলোর মুখ দেখবে।’

এদিকে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। একইসঙ্গে সাত দিনব্যাপী আনন্দ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে পরিষদের পক্ষ থেকে।

সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী ও সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান তিস্তা অববাহিকার কোটি মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, শত প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠের লাখো মানুষের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা; সেটাও আমরা বাস্তবায়ন করবো। তার ঐতিহাসিক এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে উত্তর জনপদের কোটি মানুষের স্বপ্নযাত্রা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এরই মধ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। দুই মাসের মধ্যেই অর্থাৎ চলতি অর্থবছর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধন হবে; যা নিশ্চিত করেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবীর বিন আনোয়ার।

শ্যামপুর সুগার মিলস এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, শ্যামপুর সুগার মিল পুনরায় চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অঙ্গীকার আমাদের আনন্দিত করেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি  বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের পর তৃণমূল আওয়ামী লীগ আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। স্মরণকালের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন হবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর দলকে আরও গতিশীল করবে।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি বলেন, মহাসমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আমরা ধারণ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের ধারণার বাইরে ১৫ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছেন। এতেই বোঝা যায়, এ অঞ্চল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা আগামীতেও থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী রংপুর সফরে এসে জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত জনসভায় এ অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি কথা রেখেছেন। তার আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অতীতে কেউ করেননি। বুধবারের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন তাও বাস্তবায়ন হবে।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকলেও রংপুরে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। প্রাধানমন্ত্রীর এ সফরের পর তৃণমূল আওয়ামী লীগ আরও উজ্জীবিত হয়ে এগিয়ে যাবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –