• মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রধানমন্ত্রীর রংপুর আগমনে কুড়িগ্রামবাসীর যত দাবি    

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৩  

 
আগামী বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দাবি পূরণের আশায় বুক বেঁধেছেন কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ। সফরে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনের পাশাপাশি থাকবে নতুন প্রতিশ্রুতিও। সেদিন রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। জাতীয় নির্বাচনের আগে রংপুর থেকেই নির্বাচনী সমাবেশ শুরু করছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সমাবেশ থেকে তিনি নেতাকর্মী ও জনগণের উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক বক্তব্যও দিবেন।

প্রতিশ্রুতির ৮ বছর পেরিয়ে গেছে। তাই আর প্রতিশ্রুতি নয়। ২ আগস্ট রংপুর বিভাগীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে দারিদ্র্যের শীর্ষে থাকা কুড়িগ্রাম জেলার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডাইরেক্ট ঘোষণা চাই, দিতে হবে। কথাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখে এভাবেই দাবি জানিয়েছেন রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির কুড়িগ্রামের সাবেক নেতা আব্দুল কাদের।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কুড়িগ্রামবাসীর প্রত্যাশা ও দাবির বিষয়ে দীর্ঘ আলাপচারিতা হয় কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিক একুশে পদক প্রাপ্ত আইনজীবী (পাবলিক প্রসিকিউটর) আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে। কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবির পাশাপাশি কিছু নতুন দাবিও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিশ্চয়ই সেটা কুড়িগ্রামকে বাদ দিয়ে নয়। তাই দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি কুড়িগ্রামের উন্নয়ন জরুরি। এছাড়াও শিক্ষা খাত, যোগাযোগ খাত, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, নদী শাসন ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিসহ যোগ্য নেতৃত্বের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

শিক্ষাক্ষেত্র
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’ এর খসড়া অনুমোদন করে। এরপর ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে সংসদে বিলটি পাস হয়। ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম জাকির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তবে অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্ধারণ হওয়ার পরেও নানান জটিলতায় এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি এবং পাঠদান শুরু না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার জন্য দাবি তুলেছেন কুড়িগ্রামের মানুষ। পাশাপাশি পাশের জেলা লালমনিরহাটে অবস্থিত 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়' এর একটি ক্যাম্পাস কুড়িগ্রামে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটিরও বাস্তবায়ন চেয়েছেন কুড়িগ্রামের জনগণ। এছাড়াও জেলার চরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিশেষ নজর দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

যোগাযোগ খাত
কুড়িগ্রাম জেলার দারিদ্রতার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও তা কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অনেকেই। এজন্য তিস্তা নদীর ওপর নির্মিতব্য চিলমারী উপজেলার হরিপুর ব্রিজ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের উপরে প্রস্তাবিত চিলমারী-রৌমারী সেতুর বাস্তবায়ন চায় কুড়িগ্রামবাসী। রেল যোগাযোগের প্রকৃত সুফল পেতে জামালপুর-রৌমারী রেল সংযোগ স্থাপন, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের কুড়িগ্রামের জন্য আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, চিলমারীর-পঞ্চগড় রেল চালু, কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী রেল সংযোগ পুনরায় চালু সহ রেলের সার্বিক উন্নয়নের দাবি উঠেছে।

কুড়িগ্রামে অবস্থিত দুটি স্থলবন্দরের উন্নতি সাধন এবং চিলমারীর নৌবন্দরের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রদানের পাশাপাশি ফুলবাড়ি এবং নাগেশ্বরী উপজেলায় নতুন বন্দর চালুর দাবি জানিয়েছেন আব্রাহাম লিংকন। এছাড়াও ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরে দ্রুত প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় থাকা ইমিগ্রেশন চালু করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
কুড়িগ্রামে মাত্র ১ টি টেক্সটাইল কারখানা। সেটিও দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। দারিদ্র্য বিমোচনে জেলায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিন থেকেই। এব্যাপারে আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে কুড়িগ্রামে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেটি এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। কুড়িগ্রামের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এটির বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে কুড়িগ্রামে পৃথক একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সেটাও বাস্তবায়ন হলে কুড়িগ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমরা তার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

স্বাস্থ্য খাতে সেবার মান বৃদ্ধি
জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় ৫৭ ভাগ চিকিৎসকের পদ শূন্য। ২৫০ শয্যার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চলছে ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে। হাসপাতালে বিভিন্ন দামি যন্ত্রপাতি চলছেনা দক্ষ জনবলের অভাবে। এছাড়াও হাসপাতালটিতে আইসিইউ স্থাপনের দাবি এ অঞ্চলে জনগণের দীর্ঘদিন থেকে। পাশাপাশি কুড়িগ্রামে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন কুড়িগ্রামের জনগণ। দ্রুত এসব সমস্যার অবসান ঘটবে এবং প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চল আগমনের উপলক্ষে তিনি এ বিষয়গুলো গুরত্বের সাথে দেখবেন বলে প্রত্যাশা করছে কুড়িগ্রামের মানুষ।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নতুন জনশুমারি ও গৃহ গণনার হিসেবে জেলায় বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ২৩ লাখ ২৯ হাজার ১৬১ জন, যা ২০১১ সালে ছিলো ২০ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। এছাড়াও জেলাটিতে বেড়েছে স্বাক্ষরতার হার। ২০১১ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিলো ৫৬ শতাংশ। বর্তমানে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪.৯৯ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৬৮.১৯, নারী ৬১.৯৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ৪৭.১৯ শতাংশ।

বাংলাদেশের সব থেকে বেশি দারিদ্র্য মানুষের বসবাস কুড়িগ্রামের চর রাজিব উপজেলায় ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ আর কুড়িগ্রাম জেলায় গড়ে ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –