• মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অনাবৃষ্টিতে রংপুর অঞ্চল: চরম বিপাকে কৃষক        

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২৩  

 
'আশ-পাশের খাল-বিলে পানি নেই। পুকুরগুলোয় পানি থাকলেও মাছ চাষ করায় সেখানে পাট পঁচানো যাচ্ছে না। পানির অভাবে পাট পঁচাতে না পেরে বিপাকে পড়েছি।' কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর এলাকার কৃষক মহুবর রহমান।

শুধু মহুবর রহমান নন, তার মতো রংপুর অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক চরম বিপাকে পড়েছেন। পানির অভাবে আমন চাষীরাও সময় মতো চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

গত কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল। পানির অভাবে কৃষকরা পঁচাতে পারছে না পাট। জমিতে পাট কেটে ফেলে রেখেছেন। অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ভরলে সেখানে পাট পঁচাবেন।

আবার কয়েকজন কৃষক পাটকাঠির আশা ছেড়ে গাছ থেকে আঁশ তুলে স্বল্প পানিতে 'রিবন রেটিং' পদ্ধতিতে পাট পঁচাচ্ছেন।

কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর এলাকার কৃষক আতাউর রহমান বলেন, 'গত বছর ৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে বিপাকে পড়েছিলাম। তাই এ বছর অর্ধেক জমিতে পাট লাগিয়েছিলাম। এবারেও বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলে পানি নেই। পাট পঁচাতে পারছি না। পাট কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছি।'

একই এলাকার কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, 'ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এমনিতে দিন দিন পাটের চাষ কমে যাচ্ছে। তারপরও পানির অভাব। সঠিকভাবে পাট পঁচাতে না পারলে উৎকৃষ্টমানের আঁশ পাওয়া যায় না।'

মিঠাপুকুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের কৃষক আফছার আলী বলেন, 'রিবন রেটিং' পদ্ধতিতে স্বল্প পানিতে পাট পঁচানো যায়। অনেকে বাধ্য হয়ে করছে। তবে এতে পাটকাঠি নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, 'পাটের পাশাপাশি পাটকাঠির প্রয়োজন। তাই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। যদি বৃষ্টি না হয় তবে রিবন রেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।'

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা ড. আবু ফজল মোল্লা বলেন, 'খাল-বিলে পানি না থাকায় রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'

এদিকে তীব্র রোদ উপেক্ষা করেই এখন চলছে আমন চাষাবাদের জমি তৈরির কাজ। কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে রোপন। তবে রোদের তীব্রতার চেয়েও বাড়তি খরচের ধকলে পুড়ছেন কৃষক। আমন আবাদ সম্পূর্ণ বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। তাই বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন কৃষকরা।

রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের শ্যামপুর বাজার এলাকার কৃষক আশরাফ আলী বলেন, 'হামার দোলার পানি জীবনেও শুকায় নাই। কিন্তু এবার সউগ রেকর্ড করি ফেলাইছে। বৃষ্টিও নাই, পানিও নাই। এ্যালা পানি নেওবার গেইলে টাকা দেওন লাগোছে।'

একই এলাকার কৃষক মোন্তাজ আলী বলেন, ‘বর্ষাকালেও বৃষ্টি হওছে না। আর কত দিন অপেক্ষা করমো। বৃষ্টির পানি নাই। আবাদ করমো কেমন করি। মেশিনের পানি দিয়্যা আবাদ করলে খরচ বেশি হওছে। কিন্তু হামরা তো গরিব মানুষ। চাষাবাদ না করলে খামো কী। আল্লাহ্ যদি সহায় হয়, বৃষ্টি হইলে খরচ কমবে।’

এ বিষয়ে রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, অনেক পাট এখনও কাটার বাকি রয়েছে। আশা করছি এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হবে। বৃষ্টি হলে কৃষকদের সমস্যার সমাধান হবে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, জুলাই মাসে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় ৩৫০-৪০০ মিলিমিটার। অথচ গত ২৩ দিনে ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই সময়টাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। তবে গেল ২০ দিনে রংপুর বিভাগে ২৬ থেকে ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

রংপুর বিভাগে ২০২০ সালে জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০৪ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক শূন্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২২ সালে জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার ।

চলতি মাসে ১৬৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ২০ দিন ধরে স্বাভাবিকের থেকে তাপমাত্রা বেশি ছিল ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত জুনের বৃষ্টির তুলনায় জুলাইয়ে কম হয়েছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে টানা বৃষ্টি না হলেও আগামী দুদিনে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –