• মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাড়ি ছাড়া, ৫২ বছর পর ফিরলেন মায়ের কোলে

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২৩  

 
শমসের ছিলেন গরিব ঘরের সন্তান। আট ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শমসের বড়। অর্থের অভাবে একবেলা খেয়ে তো অন্যবেলা না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। অভাবের তাড়নায় খাবার না পেয়ে ৫২ বছর আগে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হন ১০ বছরের শমসের। শনিবার (২২ জুলাই) তিনি বাড়িতে ফেরেন। এসে দেখা হয় দুঃখিনী মা সবেজান বেগমের সঙ্গে। এ সময় মা-ছেলের এক আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হয়।

শমসের নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর-কদমতলীর বাড়াইশালপাড়া গ্রামের বজর মামুদের ছেলে। তবে তিনি বাড়িতে এসে বাবাকে পাননি। তার বাবা ২০ বছর আগে মারা গেছেন।

শমসেরের পরিবারের লোকজন জানান, অভাবের তাড়নায় খাবার না পেয়ে ৫২ বছর আগে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হন ১০ বছরের শমসের। এরপর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে একটি হোটেলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকে চলে যান পুরোনো ঢাকার কলতাবাজার এলাকায়। সেখানে গিয়ে কয়েক বছর হোটেলে কাজ করেছেন তিনি। পরবর্তীকালে রিকশা চালান।

এদিকে, শমসেরের ছোট ভাই মোতালেব হোসেন ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালান বেশ কিছুদিন ধরে। সম্প্রতি মোতালেবের সঙ্গে পুরোনো ঢাকায় দেখা হয় শমসেরের। প্রথমে চিনতে না পারলেও কথাবার্তার একপর্যায় একে-অপরের পরিচয় দেন। এ সময় নিশ্চিত হন তারা সম্পর্কে আপন ভাই। পরে মোতালেব বাড়িতে ভাই শমসেরকে ফিরিয়ে আনেন বলে জানান পরিবারের লোকজন।

শমসের বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। ট্রেনে করে পার্বতীপুর নামি। এরপর মা-বাবার নাম বলতে পারলেও ঠিকানা ঠিকভাবে বলতে পারছিলাম না। তাই আর বাড়ি ফেরা হয়নি।

তিনি বলেন, আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ভেবেছিলাম মা-বাবা কেউই বেঁচে নেই। এত দিন পরে মায়ের সঙ্গে দেখা। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি। তবে কষ্ট হচ্ছে বাবাকে দেখতে না পেয়ে।

শমসেরের মা সবেজান বেগম বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছেলের সন্ধান না পেয়ে দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে চোখের জল ফেলেছি। কিন্তু এত দিন পর হলেও সৃষ্টিকর্তা ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাদা সরকার বলেন, সবেজান বেগম প্রায়ই পরিষদে এসে জানতে চাইতেন কেউ তার ছেলের কোনো খোঁজ দিয়েছেন কিনা। এত দিন পর হলেও মা তার ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। এতে আমরা অনেক আনন্দিত।

তিনি আরো বলেন, ঐ পরিবারটি অনেক গরিব। আট সদস্যের থাকার জন্য নিজস্ব কোনো বাড়িঘর ছিল না। পরে তাদের থাকার জন্য বাড়াইশালপাড়ার আবাসনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের দুটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –