• মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৈয়দপুরে চার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবার জীবনযুদ্ধ

প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২৩  

 
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৮৬ বছরের বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার। তার ৮ সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। বাকি চারজনকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন রেলওয়ে কারখানার এই অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী।

আব্দুস সাত্তার তার সন্তানদের নিয়ে থাকেন সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ এলাকায় ছোট্ট একটি বাড়িতে। ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ছাউনির একটি ছোট্ট বাড়ি। সেই বাড়ির বারান্দায় এক ছেলে আরেকজন ঘরেই মাটিতে বসে আছেন। আর দুজন অন্য একটি ঘরে শুয়ে আছেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সাত্তার ঘরে বসে আছেন।

বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার জানান, তার আট সন্তানের মধ্যে পাঁচ সন্তানই প্রতিবন্ধী। তারা প্রত্যেকেই ক্ষুদ্রাকৃতির মাথা নিয়ে ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী ২৫ বছর বয়সে ২০০৩ সালে মারা যান। বেঁচে আছেন সুস্থ দুই মেয়েসহ শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মো. এহসান (৫০), মো. মুন্নু (৪৮), মো. শওকত (৪৫) ও মো. এরশাদ (৩৮)। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, মহান আল্লাহর কি রহমত জানি না। ওদের মা বেঁচে থাকতে কষ্টটা কম ছিল। কিন্তু মারা যাওয়ায় ২০ বছর ধরে একাই প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অনেক কষ্টে তাদের লালন পালন করতে হচ্ছে। আমার ও স্ত্রীর পরিবারের মধ্যে কেউ প্রতিবন্ধী ছিল না। কিন্তু আমার ঘরের পাঁচ সন্তানই বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী।

আব্দুস সাত্তার বলেন, আমি সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় চাকরি করতাম। সেই হিসেবে পোষ্য কোটা কিংবা প্রতিবন্ধী কোঠাতে কোনো ছেলে-মেয়েরই চাকরি হয়নি। অনেক ধরাধরি করে দুজনের প্রতিবন্ধী ভাতা চালু হয়েছে। অবসর ভাতা ও ছেলেদের সরকারের সমাজসেবা বিভাগের কিছু ভাতার টাকা আমাদের জীবন চলার মাধ্যম।

এই বুড়ো বয়সে নিজের অসহায়ত্বের কথা বর্ণনা দিয়ে আব্দুস সাত্তার বলেন, একজন বাবা হয়ে প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে সময় পার করছি। কত কষ্টে তাদের নিয়ে বেঁচে আছি, তা মুখে বর্ণনা করার মতো ভাষা আমার নেই।

আব্দুস সাত্তারের প্রতিবেশী শাখাওয়াত হোসেন শওকত বলেন, ছোট্ট ওই বাড়িতে প্রতিবন্ধী চার সন্তান নিয়ে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছেন  আব্দুস সাত্তার। অভাব-অনটনে দিন পার করছেন তারা। বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ সেই বাবার কাঁধেই চার প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের জীবন তার।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি এ কর্মস্থলে যোগদান করার পর থেকে কারো কাছ থেকে শুনিনি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নেব।

সৈয়দপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –