• মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিখোঁজের ২২ বছর পর ফিরে এলেন মা, গ্রামজুড়ে আনন্দের জোয়ার

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২৩  

৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মাজেদা খাতুন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ২২ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। বছরের পর বছর খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি স্বজনরা। সন্তানরা ধরে নিয়েছিলেন তাদের মা আর বেঁচে নেই।

অবশেষে দুই দশক পর মাকে ফিরে পেলেন ৮ সন্তান। দীর্ঘ সময় পর মাজেদা বাড়ি ফেরায় গ্রামজুড়ে বইছে আনন্দের জোয়ার। আপ্লুত পরিবারের সদস্যরা। তাকে দেখতে ছুটে আসছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তবে বৃদ্ধা মাকে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য না থাকায় অসহায়ত্বের ছাপ সন্তানদের চোখমুখে।

মাজেদা খাতুনের বাড়ি উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। তিনি সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের বোদাপাড়া গ্রামের মৃত বছির উদ্দিনের স্ত্রী। ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ের জননী মাজেদা ২০০১ সালে স্বামী-সন্তান রেখে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন।

শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে মাজেদা খাতুনের বড় ছেলে ফজলুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির উঠোনে একটি চেয়ারে বসা তিনি। তাকে দেখতে সেখানে শতশত উৎসুক মানুষের ভিড়। তবে কাউকেই চিনছেন না এই বৃদ্ধা। এমনকি ৮ সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে এবং এক ছেলে ছাড়া বাকিদেরও চিনছেন না তিনি।

এর আগে, শুক্রবার তাদের এক স্বজন পার্শ্ববর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে মাজেদা বেগমকে দেখতে পান এবং চিনতে পারেন। পরে সেই স্বজন সঙ্গে সঙ্গে মাজেদার বাড়িতে খবর দিলে রাতেই ছুটে যান সন্তানরা। পরে সেখানে মাকে চিনতে পারেন সন্তানরা।

এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, আশ্রয়দাতা ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় মাজেদাকে। সেখানে গত ৪ বছর ধরে অবস্থান করছিলেন বলে জানান স্বজনরা। এদিকে বছরের পর বছর খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে তার ভেবেছিলেন মা আর বেঁচে নেই। এছাড়া স্ত্রীর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ২০০৯ সালে মারা যান স্বামী বছির উদ্দিন।

হারানো মাকে খুঁজে পেয়ে খুশি সন্তানরা। তবে মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় বৃদ্ধা মাজেদার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু স্বল্প আয়ের সন্তানরা চিকিৎসার ব্যয় জোগাড় করতে না পেরে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। তবে মাজেদার পাশে সরকার কিংবা সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তারা।

মাজেদা খাতুনের বড় ছেলে ফজলুল হক জানান, ২০০১ সালে তার বয়স ২০-২১ চলছিলো। সবে বিয়ে করেছিলেন তিনি, এরমধ্যেই নিখোঁজ হয়ে যান তার মা। বছরের পর বছর খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে ধরেই নিয়েছিলেন তার মা বেঁচে নেই। তার মায়ের অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ২০০৯ সালে মারা যান বাবা বছির উদ্দিন।

মাজেদা বেগমের ছোট ছেলে মফিদার রহমান বলেন, ৫-৬ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছি। ছোট থেকেই মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। এতদিন পর মাকে পেয়েছি, কিন্তু আমার মা আমাকে চিনতে পারছে না- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, আমার মা এখনো মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলে সবাইকেই চিনবেন বলে আশা করি।

সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল খবর পাই এই বৃদ্ধা তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নে আছেন। পরে তার ছেলেসহ সেখানে যাই এবং তাকে নিয়ে আসি। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, তার এখন সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় খোঁজ-খবর রাখবো এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যেকোনো সুযোগ-সুবিধা এলে তাকে দেওয়া হবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –