• মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিয়ে ঠিক হওয়ায় শ্যালিকার গাল-গলা কেটে দিলেন দুলাভাই

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৩  

   
নীলফামারীর জলঢাকায় সপ্তম শ্রেণির এক মাদরাসাছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকেলে জলঢাকা থানায় ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওই কিশোরীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

এর আগে গত রোববার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরী শ্যালিকাকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেন বেলাল হোসেন। অভিযুক্ত বেলাল হোসেন জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের চিড়াভিজা গোলনা বড় জুম্মাপাড়া এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে।

ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, আমার জামাই আমার ছোট মেয়েটার সঙ্গে এ রকম কাজ করবে চিন্তা করা যায় না। আমার মেয়ে কতনা কষ্ট পাচ্ছে হাসপাতালের বেডে। তাড়াতাড়ি বেলালকে ধরে যেন পুলিশ জেলখানায় ঢুকায়। 

ভুক্তভোগীর চাচা বলেন, পরিবারের সবার মতামতের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। আমাদের মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তা কল্পনার বাহিরে। আমরা চাই পুলিশ যেন দ্রুত আসামিকে ধরে আইনের আওতায় আনে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে ওই কিশোরীর বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। বিয়েতে রাজি ছিলেন না মেয়েটির দুলাভাই বেলাল হোসেন। এরপরও বিয়ের আলোচনা চলায় ক্ষুদ্ধ ছিলেন তিনি। ঘটনার দিন পরিবারের লোকজন বাহিরে অবস্থান করায় বেলাল মেয়েটিকে বাড়ির পেছনে ডাক দেন। মেয়েটি বাড়ির পেছনে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষণের চেষ্টা চালান বেলাল। পরে ব্যর্থ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কিশোরীর গলা ও গাল কেটে দিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক কিশোরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে সে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

মেয়েটির দাদি বলেন, মেয়েটা অনেক ভদ্র-শান্ত। তার বিয়ের আলাপ আলোচনা চলছে। আমার নাতি জামাই বলতো এখন বিয়ে না দেই, পরে বিয়ে দেই। সেদিন সকালবেলা একজন ঘটক এসে তার বাবাকে বলল- ছেলেপক্ষের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। পরে তার বাবা স্থানীয় কয়েকজন ও বড় জামাইকে জানালো। তারপর তার জামাই জানালো কাজে গেছে। তারপরও আমার ছেলে আসতে বলল। আমার ছেলে পানের দোকান করে, তারপর আমি ছেলেকে দোকানে যাইতে বললাম। এদিকে ছেলের বড় মেয়ে এক জায়গায় দাওয়াত খেয়ে এই বাড়িতে আসছে। 

তিনি আরও বলেন, মাগরিবের আজানের পর সে আবার বলতেছে তাকে রেখে আসতে। আমি বললাম তোমাদের তো আসার জন্য বলছেই, থাকো। এরপর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আমি বাড়ির কাছাকাছি রেখে বাড়ি আসলাম। পরে আমার বউমার চিল্লাচিল্লি শুনি। এসে দেখি আমারই নাতনি। আর আমি কিছু বলতে পারি না।

ভুক্তভোগীর বড় বোন বলেন, আমার বিয়ের ছয় বছর হচ্ছে। একটা বাচ্চা আমাদের। আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বোনের কোনো দিন খারাপ কিছু দেখি নাই, শুনিও নাই। ফোনে যে কথা বলে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতো। আমাদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলতো। আগে যদি জানতাম বাধা দিতাম। আমার স্বামী এমন কাজ করবে ভাবতে পারি নাই। আমি তার শাস্তি চাই। আজকে আমার বোনকে করছে, কিছুদিন পর আমাকে করবে, তখন কী হবে। আমার একটা সন্তান আছে, তাকে যদি মেরে সে চলে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, মেয়েটার নাকি বিয়ের আলাপ চলছিল এক প্রকার ঠিকঠাকের মতো। এই মুহূর্তে ওই জামাই বলে তার দাদির ফোনে কল করছে। মেয়েটা নাকি তখন বাহিরে বের হইছে তখন তারা খোঁজ নিবে না কই গেল মেয়েটা। আমার বাড়ি তাদের বাড়ির পাশেই। তাদের কান্নাকাটি শুনে গিয়ে দেখি গলা কাটা। 

সুমন ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, যে ঘটনাটা ঘটেছে আমরা তা কল্পনাও করতে পারি নাই। আমরা জানি তার দুলাভাই এই কাজটা করেছে। আমরা দোয়া করি মেয়েটা সুস্থ হোক। আর এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।

জলঢাকা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল আলম বলেন, মেয়েটাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। পরে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার গাল কাটা হয়। এছাড়াও গলায় কাটার দাগ আছে। মেয়েটা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ বিষয়ে মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন। আমরা আসামিকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –