• বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩১

  • || ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

১৯ বছরে কয়েক হাজার মরদেহের গোসল করিয়েছেন আব্দুল মোত্তালেব

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২৩  

 
ছোটবেলা থেকেই নানার সঙ্গে মরদেহ দেখতে যেতেন আব্দুল মোত্তালেব। তার নানা মরদেহ গোসল করাতেন। প্রায়ই নানার কাছে শুনতেন মরদেহ গোসলের নানা অভিজ্ঞতা। নানার এমন মানবিক কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে একসময় তিনিও শুরু করেন মরদেহের গোসল দেওয়া।

ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের হাজীপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মোত্তালেব। পারিবারিক জীবনে দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ চার সদস্যদের পরিবার তার। মরদেহ গোসল করানোর জন্য ডেকে তাকে পাওয়া যায়নি এমনটা কখনো হয়নি। মৃতদের গোসল করানোই যেন তার নেশা। দীর্ঘ ১৯ বছরে কয়েক হাজার মৃত মানুষের গোসল করিয়েছেন। পেশায় দোকান কর্মচারী আব্দুল মোতালেবের এমন মানবিকতায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে সম্মান করেন, ভালোবাসেন।

মরদেহ গোসল করানোর বিষয়ে মোহাম্মদ আব্দুল মোত্তালেব বলেন, আমি কালীবাড়িতে মানুষের দোকানে চাকরি করি। মৃত মানুষের গোসল করানোর কাজটা আমি ১৯৯৫ সাল থেকে করছি। দিন-রাত যখনই মানুষ আমাকে ডাকে তখনই আমি যাই। করোনার  সময় হিন্দু মানুষকেও গোসল করিয়েছি। এই কাজটা আমি মানুষের ধন্যবাদ পাওয়ার আশায় করি না। মানুষ আমাকে ভালো বলুক এটাও আমি বলি না। এই কাজটা আমি আল্লাহর জন্য করছি। প্রায় প্রতিদিনই মরদেহের গোসল করাতে হয়।

মৃত মানুষ গোসল করাতে গিয়ে কী কী সমস্যা হয়, সে বিষয়ে আব্দুল মোত্তালেব বলেন, অনেক সময় মানুষ আমাকে নিয়ে যায় কিন্তু পরে পৌঁছে দেয় না। তখনই মনটা খারাপ হয়ে যায়। গভীর রাতে যখন বাসায় আসি মাঝেমধ্যে পুলিশ আটকায়। এছাড়া অনেক মানুষ নানান কথা বলে। কয়েক দিন আগে এক লোক আমার দোকানে চাল কিনতে আসে। চাল কেনা শেষে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, চাচা আপনি তো মৃত মানুষের গোসল করান। আমি বললাম হ্যাঁ। তখনই সে আমার দোকান থেকে আর চাল নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, করোনার সময় আমাকে মসজিদে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মানুষ আমার থেকে দূরে থাকত। এই বিষয়গুলো আমার খারাপ লাগত। অনেকে আবার বলে আমি ব্যবসা করি। তবে এসব বিষয়কে আমি কিছু মনে করি না। যখন যে ডাকে আমি চলে যাই। অনেক জায়গায় দেখি নিজের ছেলে বাবার লাশ ধরে না। করোনার সময় এক হাজার এক শ’র বেশি মরদেহের গোসল দিয়েছি। এমনও হয়েছে, এক দিনে গেছে ১০ জনকেও গোসল দিয়েছি।

আব্দুল মোত্তালেব বলেন, আল্লাহর উপর ভরসা করে ওই সময় (করোনা) পিপিই ছাড়াই মরদেহের গোসল দিয়েছি। আমি ভয় পাইনি। মরতে তো হবেই। এই কাজ করার জন্য আগে যে দোকানে চাকরি করতাম তা চলে যায়। দুই মাস হয়েছে একটি নতুন দোকানে কাজ শুরু করেছি। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি আর ছেলে সরকারি কলেজে পড়াশোনা করছে। আমি অনেক বেওয়ারিস লাশ গোসল দিয়েছি কিন্তু এজন্য কারও কাছ থেকে রিকশা ভাড়াও নিইনি। আমি এটা আশাও করি না, আল্লাহ আমাকে দিবেন।

তিনি আরও বলেন, এই সেবা করতে গিয়ে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। কেউ ঘৃণা করে আবার কেউ ধন্যবাদ দেয়, ভালোবাসে। তবে মানুষের সম্মানটাই বেশি পেয়েছি। যদি আল্লাহর বান্দাদের সেবা করে মরতে পারি তাহলেই আলহামদুলিল্লাহ।

আব্দুল মোত্তালেব সম্পর্কে এলাকাবাসী জানান, যেকোনো সময় আব্দুল মোত্তালেবকে ডাকলেই পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই কাজ করে আসছেন। এজন্য এলাকার প্রায় সব মানুষই তাকে ভালোবাসেন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –