• বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১০ ১৪৩১

  • || ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাবার দেখানো পথে রাকিব এখন শেষ বিদায়ের সেবক

প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২৩  

বাবার হাত ধরে কবরস্থানের খাদেমের দায়িত্ব নেন রাকিব হাসান। সেই থেকে শুরু ‌‘শেষ ঠিকানা’ খ্যাত করবস্থানের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। যত দিন যাচ্ছে বাবার দেখানো পথ ধরে অভিজ্ঞতার ঝুলি ততই বড় হচ্ছে। মরদেহ দাফনে একের পর এক খনন করেছেন শত শত কবর। তবে শুধু কবর খনন আর রক্ষণাবেক্ষণই নয় গত ১৫ বছরে চার শতাধিক মরদেহ গোসল দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী এই যুবক।

কুড়িগ্রাম জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কের পাশে অবস্থিত কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় কবরস্থান। এ কবরস্থানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে কুড়িগ্রাম পৌরসভা। সেখানে ৩৫ বছর খাদেমের দায়িত্ব পালন করেছেন রাকিব হাসানের বাবা আব্দুস সাত্তার। ২০০৮ সালে আব্দুস সাত্তার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে খাদেমের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ছেলে রাকিব। তখন থেকেই কবর খনন, মরদেহ গোসল দেওয়াসহ কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।

সম্প্রতি কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় কবরস্থানে রাকিব হাসানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি কুড়িগ্রাম পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বাবার মৃত্যুর পর থেকে কবরস্থানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে রাকিব হাসানের। সেই থেকে  খাদেম হিসেবে একে একে ১৫ বছর কেটে গেছে তার।

কীভাবে কবরস্থানের খাদেম হয়ে উঠলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার ভাইয়ের মধ্যে আমি তৃতীয়। বাবা শেষ বয়সে যখন অসুস্থ পড়েন তখন এলাকার কেউ মারা গেলে মরদেহ গোসল ও কবর খুঁড়তে বাবাকে অনেকেই ডাকতে আসতেন। কিন্তু বাবা অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও যেতে পারতেন না। আমার অন্য ভাইয়েরাও বাবার কাজে তেমন আগ্রহ দেখাতেন না। এ কারণে বাবা আমাকেই কবর খনন ও মরদেহ গোসল দেওয়ার জন্য পাঠাতেন।

রাকিব হাসান আরও বলেন, ২০০৮ সালের দিকে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তার চলাফেরা করাটাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এ পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রাম পৌরসভা থেকে বাবার স্থলে আমাকে খাদেমের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই থেকে আমি এই কবরস্থান দেখাশুনা করে আসছি। এই ১৫ বছরে ৪ শতাধিক মৃত পুরুষ ও শিশুর গোসল দিয়েছি।

জীবন-সংসার নিয়ে জানতে চাইলে তিনি অনেকটা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, প্রতি মাসে যে সম্মানী পাচ্ছি তা দিয়ে আল্লাহর রহমতে কোনোরকমে সংসার চলে যাচ্ছে। এখন এই কবরস্থানের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক। আল্লাহ যত দিন সুস্থ রাখবেন, আমি তত দিন এই কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।

খলিল নামের এক স্থানীয় বলেন, রাকিব ভাই অনেক দিন থেকে কবরস্থানটিতে খাদেমের দায়িত্বে রয়েছেন। কেউ মারা যাওয়ার খবর পেলে তিনি দ্রুত তাদের বাড়িতে ছুটে যান। খুব দায়িত্বসহ মরদেহের গোসল ও কবর খোঁড়াখুঁড়ির কাজটি করেন। কখনো তাকে দায়িত্বে অবহেলা করতে দেখিনি।

আল্লামা ফজলুল করীম (রহ.) জামিয়া ইসলামীয়া মাদরাসার মুফতি আল আমিন বলেন, মরদেহ গোসল করা ও কবর খোঁড়া একটি মহৎ কাজ। যারা এ কাজটি করেন তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়া তাদের কাজের বিনিময়ে কেউ যদি তাদের সম্মানী দিতে চান দিতে পারবেন।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, প্রায় ১৫ বিঘা জমিজুড়ে এই কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় কবরস্থান। বয়স ১০০ বছরেরও উপর হতে পারে। এখানে হাজার হাজার মানুষের কবর রয়েছে। রাকিব এখানে খাদেমের দায়িত্ব পালন করছে। প্রতি মাসে পৌরসভা থেকে তাকে আমরা একটা সম্মানী দিয়ে থাকি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –