• বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১০ ১৪৩১

  • || ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিয়ন্ত্রিত জাল টাকা, নেই কোনো ভোগান্তি

প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২৩  

নানা সময়ে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশে জাল টাকার নোট ছাড়ে কয়েকটি প্রতারক চক্র। আর ঈদুল আজহা এলেই এ ঘটনা বেশি হয়। কারণ অন্য সব উৎসবের চেয়ে কোরবানির ঈদে টাকার লেনদেনটা হয় বেশি। টাকার লেনদেন বেশি হওয়ার কারণে এ সময়ে সক্রিয় হয়ে উঠে কয়েকটি প্রতারক চক্র।

এবারের ঈদে বাজারে জাল টাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বেশ কয়েকটি প্রতারক চক্র। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তায় কারণে বাজারে জাল টাকার নোট ছাড়তে পারেনি তারা। ফলে কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই এবারের ঈদ স্বস্তিতে করেছে মানুষজন।

রাজধানীতে জাল টাকার নোট তৈরি করে প্রায় সাত থেকে আটটি বড় বড় চক্র। এদের মধ্যে আবার ছোট ছোট দলও রয়েছে। সেগুলো সংখ্যা ২০ থেকে ২৫টি। যারা ঈদের মতো উৎসবগুলোতে মাঠে নামে এবং সক্রিয় হয়। এর মধ্যে বড় চক্রগুলোর টার্গেট থাকে শতকোটি টাকা এবং ছোট ছোট দলগুলোর টার্গেট থাকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে আটক এসব চক্রের সদস্যরা স্বীকার করেছেন, জাতীয় কোনো বিশেষ দিন বা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখেই তারা মাঠে নামে। সক্রিয় হয়। দেশজুড়ে জাল টাকা তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়। পুলিশের হাতে আটক হলে জামিনে বেরিয়ে এসেই আবারো একই ধরনের  অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে যারা প্রধান কিংবা যাদের গডফাদার বলা হয়, তারা কারাগারেই থাকে। জামিনে মুক্তি পায় না। তবুও কারাগার থেকে এ চক্রের সদস্যেদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করে।

জাল টাকার নোট বাজারে ছাড়ার প্রবণতা কত ভয়ঙ্কর তার একটি তথ্য উঠে এসেছে গত সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে।

সেখানে বলা হয়, গত দুই মাসে শুধু একটি চক্রই প্রায় ৫ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছেড়েছে। চক্রটি আরো ২ থেকে ৩ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তবে এর আগেই তাদের আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এই চক্রটির ৯ সদস্যকে রাজধানীর লালবাগের কাশ্মীর লেন থেকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন- চক্রের মূল হোতা ও মহাজন খ্যাত বাবুল মিয়া, তার স্ত্রী মিনারা খাতুন, প্রধান কারিগর সাইফুল ইসলাম, তার স্ত্রী মিলি খাতুন, কারিগর আলপনা আক্তার, ইব্রাহিম, আফাজুল ওরফে রাসেল, হাবিবুল্লাহ ও দুলাল হোসেন। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ৮২ লক্ষাধিক জাল টাকা, জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জলছাপযুক্ত বিশেষ কাগজ, বিভিন্ন রকমের মনোগ্রাম সম্বলিত স্ক্রিন, ডাইস, বিভিন্ন রং, কাগজ কাটার যন্ত্র, কাচি, চাকুসহ জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি এই জাল টাকার নোট প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের মার্কেটে পেইড এজেন্ট রয়েছে। তাদের মাধ্যমেও চক্রটি জাল টাকা ছড়িয়ে দিতো। এছাড়া তারা জেলে থেকেও জাল টাকার সিন্ডিকেট তৈরি করে। পরে জেল থেকে বের হয়ে পরে তারা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে। এছাড়া মহাজন এসব জাল নোট বিক্রির টাকা দিয়ে গাড়ি-বাড়ি করেছেন। শুধু তাই নয়, একাধিক বিয়ে করেছেন। পরবর্তীতে তাদের দিয়েও জাল নোট তৈরির ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা সূত্র ধরে প্রথমে ইব্রাহিম, আফাজুল ওরফে রাসেল, হাবিবুল্লাহ ও দুলাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কাশ্মীর লেনের একটি জাল টাকার কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে জাল টাকা তৈরিরত অবস্থায় কারখানার মহাজন বাবুল মিয়াসহ অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। ঘরোয়া কারখানা থেকে জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জলছাপ যুক্ত বিশেষ কাগজ, বিভিন্ন রকমের মনোগ্রাম সম্বলিত স্ক্রিন, ডাইস, বিভিন্ন রঙের কালি, কাগজ কাটার যন্ত্র, কাচি, চাকুসহ দুই কোটি জাল টাকা তৈরি করার উপযোগী সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

এদিকে জাল টাকার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে র‌্যাব। কয়েকদিন আগেই র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান টার্গেট করে জাল টাকার ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাল নোট তৈরি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও চালানো হচ্ছে। এছাড়া র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক অনলাইনে নজরদারি করছে। অনলাইনে জাল নোট বিক্রি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে র‌্যাব।

প্রথম দিকে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করার অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। পরে তা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান করা হয়।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –