• বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১০ ১৪৩১

  • || ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভাওয়াইয়া হারাচ্ছে সুদিন

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৩  

 
‘ও কি গাড়িয়াল ভাই/ কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে...’। একসময় কুড়িগ্রামসহ বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের গ্রাম-শহর-বন্দরে প্রাণ ছিল এ ধরনের ভাওয়াইয়া গান। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও পশ্চাত্য সংস্কৃতির ভিড়ে এখন অস্তিত্ব সংকটে এ মাটির গান। যদিও দু’একটি ভাওয়াই শিল্পীগোষ্ঠী এ গানকে চর্চা ও লালন করে আসছেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাদেরও দৈন্যদশা। এখন ভাওয়াইয়া গানের বসে না বললেই চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা সভ্যতা আর তিস্তা নদীর পাড়ের মানুষের সংস্কৃতির প্রাণ ছিল ভাওয়াইয়া গান। সেকালে গরুর গাড়ি চড়ে গাড়িয়ালের ডাক—‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে’ গানটি ছিল সর্বজন স্বীকৃত। বউঝির নাইওর আনার পথে এ গানটি ছিল একমাত্র মনের খোরাক। অথচ চর্চার অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গানগুলো।

কথা হয় জেলার ভাওয়াইয়া শিল্পী শফি ভাওয়াইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাওয়াইয়া গান তার নিজস্ব গতিতে চলছে। কেউ সাপোর্ট দিয়ে এটাকে ওপরে তুলে দেয়নি। যুগে যুগে যেসব শিল্পীরা এসেছেন, আব্বাসউদ্দীন বলেন আর কছিম উদ্দিন বলেন, ওনারা তাদের নিজস্ব মেধা-মননে ভাওয়াইকে এগিয়ে নিয়েছেন। তবে এ ভাওয়াইয়া গানকে এগিয়ে নিতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা এখন পর্যন্ত পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুড়িগ্রাম কিংবা লালমনিরহাটে যদি ভাওয়াইয়া গানের গবেষণা কেন্দ্র করা যেতো তাহলে এ অঞ্চলে মানুষজন আবার ভাওয়াইয়া চর্চা করতে পারতো। ভাওয়াইয়া গান তার আসল ঐতিহ্য ফিরে পেতো।’

ভাওয়াইয়া শিল্পী ভূপতি ভূষণ শর্মা বলেন, ‘আমি বলবো ভাওয়াইয়া গানের সুদিন ফিরে এসেছে। এখন ছেলেমেয়েরা ভাওয়াইয়া শিখতে শুরু করেছে।আগের মতো পূজা-পার্বণ, হালখাতা কিংবা লোকসঙ্গীতের আসর নেই। সে হিসেবে ভাওয়াইয়ার যে চর্চা শুরু হয়েছে তা খুবই আশার বাণী। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভাওয়াইয়া গানের ধাম নদ-নদীময় কুড়িগ্রাম আবার স্বার্থক হবে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক শ্যামল ভৌমিক বলেন, ‘বর্তমানে ভাওয়াইয়া গান তার মূল ধারা থেকে সরে যাচ্ছে। এখনই সবার উচিত গ্রামবাংলার এ সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনা।’

তিনি বলেন, ‘জেলায় ছোট-বড় মিলে ১২-১৫টি ভাওয়াইয়া ক্লাব রয়েছে। যারা ভাওয়াইয়া গানের অতীত ঐতিহ্যকে ফিরে আনার চেষ্টা করছেন। এসব সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা পেলে ভাওয়াইয়া গান তার আসল প্রাণ ফিরে পাবে।’

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ভাওয়াইয়া গানের বেশ কয়েকটি চর্চা কেন্দ্র, সংগঠন কুড়িগ্রামসহ অন্যান্য উপজেলায় রয়েছে। সংগঠনগুলো ভাওয়াইয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে সরকারিভাবে এ অঞ্চলে ভাওয়াইয়া গানের গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠলে ভাওয়াইয়া গানের আবার সুদিন ফিরে আনা সম্ভব।’

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –