• বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১০ ১৪৩১

  • || ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোরবানির হাটে উঠতে প্রস্তুত ৯০০ কেজির ‘জমিদার’

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২৩  

 
রংপুরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট গুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। হাট তেমনটা না জমলেও বেশকিছু গরুর খামার জমজমাট। হরেক রকম নাম, মান আর গুণের কারণে আলোচনায় থাকা গরু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘জমিদার’।

কালো রঙের এই জমিদার মানুষের ভিড় দেখলেই শুরু করে মাতলামি। জমিদারের মতোই তার চলাফেরার ভাবটা। প্রায় তিন বছর ধরে পরম-মমতা আর ভালোবাসায় জমিদারকে আগলে রেখেছেন মালিক।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার খোপাতি গ্রামের বাসিন্দা খামারি আশরাফুল মাষ্টার। তার খামারেই জন্ম থেকে বেড়ে উঠেছে শাহিওয়াল জাতের এই গরুটি। খাওয়া-দাওয়া, স্বভাব আর চলনবলনের কারণে আদর করে গরুটিকে ডাকা হয় ‘জমিদার’ নামে। দেশির খাবারে নাদুস-নুদুস ভাবে বেড়ে ওঠা ৩৪ মাস বয়সী জমিদারের ওজন এখন ৯০০ কেজি।

সরেজমিনে খামারে গিয়ে দেখা যায়, জমিদারকে নিয়ে ব্যস্ত আশরাফুলের পরিবার। বিশাল আকৃতির এই গরুটিকে লালন পালন করে হাটে তোলার জন্য নেয়া হচ্ছে প্রস্তুতি।

স্থানীয়রা বলছেন, পুরো গ্রামে জমিদারের মত আরেকটা গরু নেই। জমিদারই তাদের কাছে সেরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ জমিদারকে এক নজর দেখার জন্য আসছে।

জানা গেছে, জমিদার দেশি ও প্রকৃতি নির্ভর খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। একারণে দেখতেও অনেক স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী। হৃষ্টপুষ্ট এই জমিদারকে ঘিরে এলাকার মানুষের যেমন কৌতুহল, তেমনি অন্য খামারি ও ব্যবসায়ীদের রয়েছে আগ্রহ।

খামারি আশরাফুল মাষ্টারের দাবি, গ্রামে অনেক খামারের মধ্যে তার পোষা গরু ‘জমিদার’ সেরা। আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে জমিদারকে বিক্রির করতে প্রস্তুত তিনি। এ জন্য গরুটির হাঁকিয়েছেন ৭ লক্ষ টাকা।

জমিদার নাম রাখার কারণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, গরুটির খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরায় বেশ জমিদারি ভাব, তাই বাসার সবাই আদর করে জমিদার বলে। এখন জমিদার প্রতিদিন ৩ কেজি খুদ চালের ভাত, ৪ কেজি ভুসি, ৪ কেজি ধানের গুঁড়া, কলা ও ২০ কেজি নেপিয়ার ঘাস খাচ্ছে। এছাড়াও দেশি ও লতাপাতাও জমিদারের বেশ পছন্দ। বর্তমানে প্রতিদিন ব্যয় হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

আশরাফুল আরও জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে গরুর দালাল ও ব্যবসায়ীরা এসে জমিদারের দরদাম করছে। সর্বোচ্চ দাম ওঠেছে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা।

কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিঞ্চিতা রহমান বলেন, আশরাফুলের গরুসহ উপজেলার সকল খামারে গিয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। অনলাইন হাটের মাধ্যমে কৃষক ও খামারিদের পশু ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকল খামারিকে এজন্য উদ্বুদ্ধও করা হচ্ছে।

এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রায় ১৪ লাখ পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও গৃহস্থরা। ভালো দামের আশায় কোরবানির বাজার ধরার জন্য এসব পশু যত্ন সহকারে লালন-পালন করছেন তারা।

রংপুর প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এ বিভাগের আট জেলায় দেড় লাখের বেশি খামারি প্রায় পাঁচ লাখ গরু বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এছাড়া দুই লাখ গৃহস্থ প্রায় ৯ লাখ গরু ও খাসি বাজারে বিক্রি করার জন্য তৈরি করেছেন। এর মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৩ হাজার খামারে দুই লাখের ওপর গরু রয়েছে।

গতবছর কোরবানি উপলক্ষে ১৩ লাখ গরু-খাসি প্রস্তুত থাকলেও চাহিদা মিটিয়ে আড়াই লাখের বেশি পশু উদ্বৃত্ত ছিল। এবার ১৩ লাখ ৭০ হাজার গরু-খাসি কোরবানির উপযুক্ত রয়েছে। এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও প্রায় তিন লাখের মতো পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল হাই।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –