• বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১০ ১৪৩১

  • || ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের নতুন হাট চালু

প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২৩  

রংপুরের বদরগঞ্জে হাঁড়িভাঙা আম সরবরাহ, বিক্রয়, বিপণন, সংরক্ষণে নতুন হাট (বাজার) উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকেলে উপজেলার ওসমানপুর বাহরুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে এ হাটের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট।

পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌ্ধুরী ডিউক। এ সময় তিনি হাঁড়িভাঙা আমের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে চাষি, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এখন হাঁড়িভাঙা আমের কদর বেড়েছে। দেশ-বিদেশে এই আমের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারপ্রধান নিজ উদ্যোগে এই আম রপ্তানির পথ প্রসারিত করেছেন। বিভিন্ন দেশের প্রধানের কাছে হাঁড়িভাঙা আম উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এই আমের মধ্য দিয়ে দেশের বাইরে বাংলাদেশের সঙ্গে রংপুর জেলারও সুখ্যাতি বাড়ছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা জাহানুর, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান, ওসমানপুর বাহরুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি মোহাম্মদ মাহফুজুল হক চৌধুরী, ১৪নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিন্দিউল হাসান চৌধুরী শান্ত প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ।  

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট জানান, বদরগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান রয়েছে। এখান থেকে অনেক বেশি আম উৎপাদন হয়। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা যেন ভালো দাম পায় সেজন্য বদরগঞ্জে নতুন এই হাটের কার্যক্রম শুরু করা হলো। আশা করছি এতে চাষি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবেন। সঙ্গে আমাদের উপজেলার উৎপাদিত আমের বাজার আরও প্রসারিত হবে।

কৃষি কর্মকর্তা জোবাইদুর রহমান বলেন, বদরগঞ্জে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে ৮-৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই হাটে যাতে চাষি, ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম বাড়ে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

হাটের উদ্বোধনী দিনে বদরগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে এসে খুচরা ও পাইকারি মূল্যে বিক্রি করেন। কম দামে আম কিনতে পেরে খুশি সাধারণ ক্রেতারা। রংপুর থেকে আম কিনতে আসা মনির হোসেন জানান, রংপুরের পদাগঞ্জের চেয়ে বদরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর বাহরুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে আমের হাটে দাম কিছুটা কম।

এদিকে রংপুরে প্রতি বছরই জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে পাওয়া যায় অতি সুমিষ্ট আঁশহীন হাঁড়িভাঙা আম। তবে এবার তীব্র দাবদাহের কারণে জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে এসেছে বিষমুক্ত এই আম। চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে এ বছর হাঁড়িভাঙা আম আগাম পেকেছে। এ কারণে জেলা প্রশাসন ও কৃষি অধিদপ্তরের অনুমতিক্রমে ২০ জুনের পরিবর্তে ১০ জুন থেকে বাজারে আম সরবরাহ শুরু করেছেন চাষিরা।

হাঁড়িভাঙার মৌসুমে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জে। এছাড়া রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন রামপুরা সড়কে আমের জমজমাট বিকিকিনি হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি রংপুর সিটি বাজার, লালবাগ, মডার্ন মোড়, ধাপ বাজার, শাপলা চত্বরসহ নগরীর বিভিন্ন হাট-বাজার এবং শহরের মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে এই আম।

এদিকে আম পাড়া ও বাজারে সরবরাহকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে আম চাষি, ব্যবসায়ী, পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট সাইজের হাঁড়িভাঙা আমের মণ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং বড় সাইজেরটা ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার আমের বাজার ভালো যাবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –