• শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১২ ১৪৩১

  • || ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গৃহবধূকে বেঁধে রেখে নির্যাতন, ওষুধ দিয়ে ন্যাড়া করার অভিযোগ

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২৩  

 
রংপুর সদর উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে শাহনাজ (২৪) নামে এক গৃহবধূকে ১৫ দিন বেঁধে রেখে নির্যাতনের পর ওষুধ দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গৃহবধূ ও তার দিনমজুর পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ঘটনাটি সদর উপজেলার হরিদেবপুর ফকিরপাড়ার। 

ভুক্তভোগীর পরিবার ও অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, ৬ বছর আগে রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ফকিরপাড়া গ্রামের মহির উদ্দিনের ছেলে ট্রলি চালক ফিজু মিয়ার সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের বড় মটুকপুর গ্রামের শাহাজাদা মিয়ার মেয়ে শাহনাজের। তাদের ঘরে ৫ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় শাহনাজের পরিবার জামাইকে যৌতুক হিসেবে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেন। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য শাহনাজের উপর স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে আসছিল। নির্যাতন সইতে না পেরে শাহনাজ বাবার বাড়িতে চলে আসলে সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে শ্বশুরবাড়ির লোকজন শাহনাজকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সম্প্রতি বাড়ি নির্মাণের জন্য বাবার বাড়িতে থেকে টাকা আনতে স্বামী ফিজু মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা শাহনাজকে চাপ দেয়। এতে সে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ১৫ দিন ধরে শাহনাজকে ঘরের ভেতরে বেঁধে মারপিট করে এবং তার মাথায় মেডিসিন ঢেলে দেয়। এতে মাথার সব চুল পড়ে গিয়ে ন্যাড়া হয়ে যায় শাহনাজ। এরই মধ্যে শাহনাজের পরিবার খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। 

গত ৭ মে মমিনপুর ইউপি মেম্বার ছাইদুল হককে সাথে নিয়ে শাহনাজ, তার বাবা, মা উপস্থিত হয়ে স্বামী ফিজু মিয়া, শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। খবর পেয়ে থানা থেকে ফেরার পথে ইউপি মেম্বারের মোটরসাইকেল আটকিয়ে শাহনাজের বাবাকে স্বামী ফিজু মিয়া মারধর করে এবং ইউপি মেম্বারকে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ওই ইউপি মেম্বার তাৎক্ষনিক থানায় গিয়ে ফিজু মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। 

মমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছাইদুল হক বলেন, শাহনাজের বিয়ের পর থেকে একাধিকবার সালিশ করা হয়েছে। প্রতিবার যৌতুকের জন্য তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজনই এসে সালিশের মাধ্যমে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। গত ২ থেকে ৩ মাস আগেও শাহনাজকে নির্যাতন করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। আমরা সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করেছি। সম্প্রতি শাহনাজকে মারধর করে মেডিসিন দিয়ে চুল ন্যাড়া করার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে তার স্বামীসহ অন্যান্যরা আমার উপর চড়াও হয় এবং আমার মোটরসাইকেল থাকা শাহনাজের বাবাকে মারধর করে। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশ এখনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
 
হরিদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য টিটু মিয়া নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওউ গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। তিনিও এই নির্যাতনের বিচার চান।  

ভুক্তভোগী শাহনাজ বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা যৌতুকের জন্য আমার উপর নির্যাতন করে আসছিল। এরপরেও কৃষি শ্রমিক বাবা বিয়ের সময় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা জামাইকে দিয়েছিল। সম্প্রতি শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকা আনতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে ১৫ দিন ধরে ঘরে বেঁধে মারপিট করে। সেই সাথে আমার চুলে মেডিসিন দিয়ে ন্যাড়া করে দেয়। আমি থানায় অভিযোগ করতে গেলে স্বামী ফিজু মিয়া আমার বাবাকে মারপিট করে। আমি ফিজু মিয়ার সংসার করবো না, আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।
 
হরিদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। 

রংপুর সদর কোতয়ালী থানার ওসি সুশান্ত কুমার বলেন, শাহনাজ বেগম তার উপর নির্যাতনের ঘটনায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। তার মাথায় ওষুধ দিয়ে চুল ন্যাড়া করা হয়েছে কি না সেটি জানতে মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে। অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –