• শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

  • || ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভালোবাসার স্টেশনে আবার থামবে প্রিয়জন

প্রকাশিত: ২ মে ২০২৩  

 
টেলিফোন লাইন সচল। পাশে পড়ে আছে লাল রংয়ের কন্ট্রোলার। ভেতরে কাঠের তৈরি কালো চেয়ারগুলোতে ধুলোবালির আস্তরণ। ঘরের উপরে শ্যাওলা পড়ে গেছে। দরজা-জালানাগুলোতে পড়েছে মরীচিকা। এর মাঝে ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ লাইটের আলো জ্বলছে। মরিচাপড়া একটি তালা দিয়ে ঘরটি আবদ্ধ। জালানার কাঠগুলো খসে পড়ছে। মানুষের আনাগোনা নেই। নেই যাত্রীদের কোনো তাড়া। বলছি দিনাজপুরের পার্বতীপুরের ভবানীপুর রেলস্টেশনের কথা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। ভবানীপুর রেলস্টেশনটি ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সিমেন্টের তৈরি দুটি বড় ঘর রয়েছে সেখানে। ঘরের দেয়ালে অঙ্কিত রয়েছে স্টেশনে ট্রেন থামার সময়সূচি। সেগুলোও সিমেন্টের আস্তরণের সঙ্গে অর্ধেক উঠেও গেছে। পাশে রয়েছে যাত্রীদের বসার জন্য সিমেন্টের তৈরি চেয়ার। যার একটি পা ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের পদচারণা নেই স্টেশনে। ফলে গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে স্টেশন চত্বর। যাত্রীদের জন্য টয়লেট,  বিশ্রামাগারটি ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নেই কোনো স্টেশনমাস্টারও। চারদিকে এখন শুনশান নীরবতা। রাত হলেই বসে মাদকের আখড়া। যা দিনদিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

জানা যায়, ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ আমলে ভবানীপুর রেলস্টেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর্যন্ত এখানে সব ধরনের ট্রেন থামতো। তবে দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে স্টেশনটি। এ স্টেশনে এখন আর থামে না লোকাল বা আন্তঃনগর ট্রেন। মাঝে খুলনা মেইল নামে একটি ট্রেন থামে। পাঁচ বছর আগেও তিনটি ট্রেন থামত। তবে এখন মাত্র একটি ট্রেন থামে। মাঝে মাঝে থামে না। তনে স্টেশনটি পুনরায় চালু করতে বিভিন্ন সময় দাবি করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও কাজ হয়নি তাতে। তবে সব ছাপিয়ে আবারও স্টেশনটি চালু রাখার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

ভবানীপুর রেলস্টেশনটি ৮-নং হাবড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। ঐ ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ২০-২৫ বছর আগে এই স্টেশনে সব ধরনের ট্রেন থামতো এবং হাজারও মানুষ ওঠানামা করতেন। কাউন্টারে ভিড় ছিল, লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটত মানুষজন। এখান থেকে যাত্রীরা ফুলবাড়ি, পার্বতীপুর, বিরামপুর যেত। পাকের হাট, বীরগঞ্জ ও রানীর বন্দর এলাকার যাত্রীরা সৈয়দপুর, পার্বতীপুর ওখানে (ভবানীপুর) হাট-বাজারে মালামাল আনা-নেয়া ও যাতায়াত করতেন।  কিন্তু স্টেশন বন্ধ হওয়ার কারণে পাশ্ববর্তী উপজেলা ফুলবাড়ি ও আমাদের উপজেলা পার্বতীপুরে গিয়ে তাদের কাজ করতে হয়। এখানে কেউ আসে না। আমাদেরও কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের যাতায়াতের জন্য ১৬ কিলোমিটার অতিক্রম করে পার্বতীপুরে গিয়ে করতে হয়। তবে স্টেশনটি চালু হলে আমাদের ভালো হবে।

ভবানীপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ জানান, ঐতিহ্যবাহী স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার পর সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমও স্থগিত হয়ে যায়। স্টেশনকে ঘিরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। এতে স্থানীয়ভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়ে পড়েছে। আমাদের ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্টেশনটি পুনরায় চালুর দাবি জানাই আমরা।

ফুলবাড়ি মহিলা ড্রিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রোকাইয়া জাহান বলেন, আমাদের কলেজ ফুলবাড়িতে। আমরা সকাল সকাল উঠে বাসে করে অনেক সময় ব্যয় করে ফুলবাড়িতে গিয়ে ক্লাস করি। বাসে দিন দিন খরচ বাড়ছে। আগে ১০ টাকায় হতো। এখন যেতে লাগে ২০ টাকা। আসতে লাগে ২০ টাকা। যাতায়াত খরচ ৪০ টাকা পড়ে যায়। মাসে অনেক টাকা লাগে। স্টেনশনটি চালু হলে এত্তো টাকা লাগতো না। কম টাকায় যাওয়া যায়। আমরা দাবি জানাই স্টেশনটি চালু হোক। আমাদের যাতায়াতের সুবিধা হবে।

ভবানীপুর রেলস্টেশনটি চিলাহাটি-পার্বতীপুর-সান্তাহার-দর্শনা লাইনের অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলটি বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের আওতায়। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মো. আবদুল আউয়াল ভুঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের স্টেশন মাস্টার কম রয়েছে। তবে সেখানে দেওয়ার মতো স্টেশন মাস্টার আমরা পেয়েছি। প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণের জন্য সময় লাগছে। যথাযথ সময়ে সেখানে পাঠানো হবে। আনুমানিক পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে তাদের ট্রেনিং শেষ হবে। এর মধ্যে আগে হলে আমরা তাদের সেখানে পাঠিয়ে দেবো।

তিনি আরো বলেন, স্টেশনটি চালু হতে আনুমানিক সাত-আট মাস সময় লাগবে। স্টেশনটি চালুর আগে যেসব অবকাঠামো রয়েছে, সেগুলো ঠিক করা হবে। স্টেশনটি চালু হলে আমাদের অপারেশনাল সময়টি কমে যাবে। আমাদের জন্যও ভালো হবে। কারণ, আমাদের একটি ট্রেন পার্বতীপুর ছাড়লে সেটি ফুলবাড়ি না পৌঁছানো পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন ছাড়া যেত না। স্টেশনটি চালু হলে সেটি সম্ভব হবে। আর সেখানে ট্রেন ক্রসিং ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা শিগগিরই স্টেশনটি চালু করবো।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –