• রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

  • || ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাড়া ফেলেছে পুতুল রানীর কেঁচো সার  

প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৩  

 
কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুরের শ্রীমতি পুতুল রানী। শুধু পুতুল রানী নন, শিক্ষা পোদ্দার, সোনা রানী রায়সহ আশপাশের অনেকেই এ সার উৎপাদনে মনোযোগী হচ্ছেন। বর্তমানে এই গ্রামের প্রায় ১৫-২০ জন উদ্যোক্তা বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার উৎপাদন করছেন।

কেঁচো সার উৎপাদন করে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের বড়হরিপুর পোদ্দার পাড়া গ্রামের শ্রীমতি পুতুল রানী কৃষকদের কাছে এখন পরিচিত নাম। তার তৈরিকৃত কেঁচো সার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পুতুল রানীকে দেখে গ্রামের অনেক যুবক ও নারীরা এখন ঝুঁকে পড়ছেন বিষমুক্ত কেঁচো বা জৈব সার উৎপাদনে।

উদ্যোক্তা পুতুল রানী বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে যাচ্ছি এই কেঁচো সার বিক্রি করে। প্রতি কেজি সার ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করা যায়। পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ, ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, গ্রাম বিকাশ, পানের বহরসহ স্থানীয় কৃষকরাই এসব সার কিনে নেয়।’

২০১৮ সালে তিনি স্থানীয় উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কেঁচো সার ও কুইক কম্পোস্ট সার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পুতুল রানী বাড়ির আঙিনায় দুটি রিংয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে গত ৬ বছর আগে ২টি রিংয়ে ৩০টি কেঁচো দিয়ে সার তৈরি শুরু করেন। তার খামারের নাম দিয়েছেন ‘বড়হরিপুর সিআইজি মহিলা ফসল সমবায় সমিতি লিমিটেড’।

শ্রীমতি পুতুল রানী বলেন, ‘কৃষি অফিসের পরামর্শে কেঁচো সার তৈরি শুরু করি। কেঁচো সার তৈরিতে ৩৫-৪০ দিনের মতো সময় লাগে। গোবরের মধ্যে কেঁচো ডিম দেয় এবং সেখান থেকেই কেঁচো জন্মে ৭ থেকে ৮টা। বর্তমানে কেঁচোর পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখের উপরে। এখন কেঁচোর পরিমাণ বেশি হওয়ায় সময়ও কম লাগে।’

তিনি বলেন, ‘নেট (জাল) দিয়ে চালাই (ঝেড়ে) করে কেঁচো পৃথক করা হয়। প্রতিটি রিং থেকে প্রায় ৪০ কেজি কেঁচো সার হয়। আর প্রতিমাসে ৬০টি রিং থেকে ২০০০-২৪০০ কেজি সার হয়ে থাকে। প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা দরে বিক্রি করে খরচ বাদে প্রতি মাসে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা পেয়ে থাকি। এ ছাড়া প্রতি কেজি কেঁচো ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।’

পুতুল রানীর স্বামী কৃষক প্রভাষ রায় বলেন, ‘আমরা দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেই ক্ষেতে মরিচ, সরিষা, আলু, পোটল, শিম, কপি ও করলা উৎপাদন করি। এই সবজি উৎপাদনে এই সার ব্যবহার করি। এ বছর এক বিঘা জমির মরিচ বিক্রি করেছি ১ লাখ টাকা, আলু ৫০ হাজার টাকা, পোটল ৬০ হাজার টাকা, কপি ৫০ হাজার টাকা, শিম ১০ হাজার ও করলা ৩০ হাজার টাকা। এ থেকে বছরে আয় হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।’

পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ গত রবিবার বিকেলে পুতুল রানীর কাছ থেকে ৩ হাজার ৭০০ কেজি কেঁচো সার কিনেছেন। গত মার্চ মাসে তিনি ৩৩ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করেছেন।

পুতুল রানী বলেন, ‘ইঁদুর, টিকটিকি ও আরশোলা যাতে কেঁচোকে খেয়ে নিতে না পারে এজন্য প্রতিটি রিং চট, ছালা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখি। নিয়মিত রিংয়ে রাখা গোবর উল্টে দেওয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজে আমার স্বামী, ছেলে ও মেয়ে সহযোগিতা করে। এ কাজ করতে গিয়ে প্রথমে একটু ভয় হতো। ঠিকমতো খাবারও খেতে পারতাম না। কিন্ত এখন সে ধরনের সমস্যা আর নেই।’

সূত্র- জাগো নিউজ

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –