• রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

  • || ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৈয়দপুরের শোকাবহ স্থানীয় শহীদ দিবস আজ

প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৩  

আজ শোকাবহ ১২ এপ্রিল। মুক্তিযুদ্ধের এদিনে নীলফামারীর সৈয়দপুরে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) সদস্যসহ দেড় শতাধিক পেশাজীবী, রাজনৈতিক ও ছাত্র-যুব নেতাদের ক্যান্টনমেন্টে আটকে রেখে দীর্ঘ নির্যাতনের পর ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়।

বেদনা বিধূর ওই দিনটি প্রতিবছর স্থানীয় শহীদ দিবস হিসাবে পালন হয়ে আসছে।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সন্তান ও রক্তধারা সৈয়দপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মহসিনুল হক বলেন, সৈয়দপুর শহরটি দেশের অন্যান্য জনপদের মতো নয়। শহর অবাঙালি (বিহারী) অধ্যুষিত। ফলে বাঙালিরা এখানে সংখ্যা লঘু। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর সৈয়দপুর শহরটি রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে। দফায় দফায় বাঙালিদের উপর নির্যাতন করতে থাকে বিহারীরা। অবরুদ্ধ বাঙালিদের বাড়িতে শুরু হয় অগ্নিসংযোগ।  

সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের পাকিস্তানি আর্মিদের উস্কানিতে এখানকার বিহারী যুবকরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। এমন অবস্থায় ওই অবরুদ্ধ উদ্ধার করতে ছুটে আসেন দিনাজপুরের সাতনালা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা মাহতাব বেগ। দিনটি ছিল ২৪ মার্চ। তিনি কয়েক হাজার গ্রামবাসী নিয়ে সৈয়দপুর শহরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। মাহতাব বাহিনীর হাতে ছিল মাত্র কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোডা।

পাকিস্তানি বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের কাছে ওই যুদ্ধ অসম হয়ে উঠে। প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হন মাহতাব বেগ। তার ছিন্ন মস্তক হাতে নিয়ে খোলা জিপে তুলে গোটা শহর প্রদক্ষিণ করে বিহারীরা। এতে শহরময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

মহসিনুল হক আরও বলেন, মাহতাব বেগকে হত্যার পর শহরে জুলুমের মাত্রা বেড়ে যায়। ২৫ মার্চ রাতে মিলিটারি বন্দি করেন তৎকালীন এমপিএ ডা. জিকরুল হককে। একে একে বন্দি করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল হক, ডা. বদিউজ্জামান, ন্যাপের সৈয়দপুর থানার সভাপতি ডা. এস এম ইয়াকুব, শিল্পপতি বাবু তুলশীরাম আগরওয়ালা, রেলওয়ে কর্মকর্তা মো. আয়েজউদ্দিনসহ বিশিষ্টজনদের।  

বন্দিদের সৈয়দপুর সেনানিবাসে কোয়ার্টার গার্ডে রাখা হয়। চলে অমানষিক নির্যাতন। এরপর ১২ এপ্রিল রংপুর সেনানিবাসের অদূরে নিসবেতগঞ্জ বধ্যভূমিতে নিয়ে গ্রিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের খবর পরদিন আকাশবানী কোলকাতায় প্রচারিত হয়েছিল।

যুদ্ধের ৯ মাসে সৈয়দপুরের চার হাজারেও বেশি বাঙালিকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী ও বিহারীরা। এসব হত্যাকাণ্ড স্মরণীয় রাখতে প্রতিবছর ১২ এপ্রিল নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়ে আসছে। রমজান মাসের কারণে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রক্তধারা ৭১ ও প্রজম্ম ৭১ জেলা শাখা।  

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- কালো পতাকা উত্তোলন, বুকে কালো ব্যাজ ধারণ, শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতি অম্লানে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সজিদ-মন্দির গির্জায় বিশেষ প্রার্থণা ও আলোচনা সভা।  

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –