• রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৪ ১৪৩১

  • || ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করি হামরাও বাঁইচপার চাই’

প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২৩  

‘হামরাও এলা কামাই করি হামার সংসার চালাই। ছওয়া-পোয়াকে লেখাপড়া করাই, হামরাও এলা স্বপন দেখি। বেটিছাওয়া গুলা এলা কোনো কামতে পাছত নাই। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ, সংগ্রাম করি হামরা এলা বাঁইচপার চাই।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, লালমনিরহাটের তিস্তা চরাঞ্চলের বৃদ্ধ নারী আলেয়া বেওয়া।

শুধু আলেয়া নয় আলেয়ার মতো আরো শতশত নারী এখন ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত করতে হচ্ছে জীবন যুদ্ধ। সচ্ছলতা ফিরে আসছে সংসারিক জীবনে। শুধু অন্যের জমিতে কাজ করেই সংসার চালান না এসব নারী। জমিতে ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে অনেকেই। চরাঞ্চলের জমিতে নারীরা চাষাবাদ করছে ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল। সংসারে বাড়তি আয় করতে নারীরা গাভী পালন করে। তাদের সেই গাভী চরাঞ্চলের খোলা মাঠে ঘাস ও লতাপাতা খাইয়ে বড় করে বিক্রি করে এখন অনেকেই সাবলম্বী হচ্ছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, তিস্তার চরে এ বছর জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর। যার মধ্যে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ফসলের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ফসল হচ্ছে ভুট্টা। আর এই ভুট্টা লালমনিরহাটে একটি ব্রান্ডিং ফসল হিসেবে পরিচিত। এ বছর জেলায় ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে ৩২ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে চরাঞ্চল।

তিস্তা চরের বাসিন্দা আমেনা বেওয়া বলেন, স্বামী নাই, সংসার তো মোকে (আমাকে) চালাইতে হইবে। হামরা মহিলা দেখি আগোত হামাক কাও কাজে নেয় নাই। এলা হামাকও কাজে নেয়। ১৭০ টাকা দিন পাই। গঞ্জত (বাজারে) চাউলের যে দাম, ফের কাঁচা তরকারি, ময়-মসল্লা আছে। এই টাকা দিয়া টানা টানি করি সংসার চলে। তারপরও হামরা এলা আগের থাকি একনা (একটু) ভালো আছি।

একই এলাকার নাজমা বেগম বলেন, জামাই (স্বামী) কামাই (কাজ) করে তিস্তার চরত। সেটে তামরা (সেখানে তিনি) ২৫০ টাকা পায়, এই টাকা দিয়াও সংসার চলে না। ছওয়া পোয়াকস (ছেল-মেয়ে) লেখা পড়া কোরবারও (করতেও) পাইনা। তাই স্বামী যখন কাজে যায়, মুইও (আমিও) মাঝে মাঝে স্বামীর সাথে কাজত যাঁও।

সমাজকর্মী, লেখক, কবি ও গবেষক ফেরদৌসী বেগম বিউটি বলেন, সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে লালমনিরহাট জেলার ইতিহাসে তিস্তা ধরলার মানুষের হাসি-কান্না জড়িয়ে আছে। তিস্তার নারীদের জীবন হচ্ছে ভাঙ্গা গড়া। তারা জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন।

তিনি আরো বলেন, আগে তিস্তা চরের শিশুরা স্কুলে যেতে চাইতো না, সেই শিশুরাও এখন স্কুলমুখি। তারাও এখন জেনে গিয়েছে আমাদেরও লেখাপড়া শিখতে হবে। নারীরা এখন কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, ক্ষমতায় এবং অধিকারে অনেক সচেতন।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –