• সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

  • || ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আদিতমারীতে তিস্তার চরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

 
তিস্তার চর এলাকায় গিয়ে নিরক্ষর মানুষের স্বাক্ষরতা শেখানোর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের এই কাজে উৎসাহ দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

লালমনিরহাট জেলা শিক্ষাখাতে অনেকটা এগিয়ে গেলেও এখনও রয়েছে নিরক্ষরতা। সেই নিরক্ষরতা দূরীকরণে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের তারুণ্যদীপ্ত শিক্ষার্থীরা নিয়েছেন এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। শুধু স্বাক্ষরতাই নয়, প্রাথমিক শিক্ষা তথা অক্ষরজ্ঞান দান, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী করাসহ নানান পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।

উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে স্বাক্ষরতা ও প্রাথমিক শিক্ষাদানে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন তারা। তিস্তার বালুচর পাড়ি দিয়ে, রোদ মাথায় নিয়ে দলবেধে এলাকায় গিয়ে কথা বলে খোশগল্পের মাধ্যমে স্বাক্ষরতা শেখানো হচ্ছে। তালিকা করে পরবর্তীতে আবারও যোগাযোগ করে শতভাগ স্বাক্ষরতা পূরণের পরিকল্পনা তাদের।

জানা গেছে, জেলায় দারিদ্র্য ও নদীভাঙনে দিশেহারা অনেকেই এখনও রয়েছেন অক্ষরজ্ঞানহীন। প্রতিবছর ঝরে পড়ছে শত শত শিক্ষার্থী। বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ। অভাবের কারণে প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে হাজার হাজার শিশু।

এদিকে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টি ওয়ার্ড এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন এসব এলাকার বাসিন্দারা নদী তীর কিংবা অন্য কোথাও স্থান নিয়েছেন। এদের অধিকাংশই স্বাক্ষর করতে জানেন না। জরুরি কাজে টিপসই তাদের একমাত্র ভরসা।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে টিপসই তুলে দেওয়া হলে জমির দলিল থেকে শুরু করে যেকোনো কাজেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে এসব মানুষকে। সেই চিন্তা থেকে ইউনিয়নটিতে স্বাক্ষরতা শেখানো কার্যক্রম শুরু করেছেন মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গ্রুপ ভিত্তিক উপদলে বিভক্ত হয়ে ধুলা-বালি মাড়িয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে শিক্ষার্থীরা খুঁজে বের করছেন নিরক্ষর মানুষদের। সেখানে খোশগল্প কিংবা নানান উপস্থাপনায় স্বাক্ষর ও প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে হাতে কলমে স্বাক্ষর করা শেখাচ্ছেন তারা। এছাড়াও মোবাইল নম্বরসহ নাম-ঠিকানা তালিকা করে ১০-১২ দিন পর আবারও এসে শিখিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন তারা।

এরইমধ্যে প্রায় দুই শতাধিক লোকের তালিকাও করা হয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব এলাকার তালিকা করে গ্রুপভিত্তিক নিকটতম শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব দিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান ও স্বাক্ষরতা শিখিয়ে সফল হওয়ার পরিকল্পনা তাদের।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাত তাসনীম দিপা বলেন, স্কুলের স্যারদের সহযোগিতায় আমরা তিস্তার চর এলাকার নিরক্ষর মানুষদের খুঁজে বের করে তাদেরকে নাম লেখা শেখাচ্ছি। এই কাজগুলো করে আমরাও আনন্দিত।

তত্ত্বাবধায়নকারী শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে খুবই অনুপ্রাণিত। এ কাজে আমরা শিক্ষার্থীদের উৎসব প্রদান করছি। তিস্তার চরবেষ্টিত এলাকায় প্রায় শতাধিক নিরক্ষর মানুষের তালিকা করেছি। পর্যায়ক্রমে তাদের নামের স্বাক্ষর শেখানো হবে। আমরা চাই অত্র এলাকার মানুষ যাতে আর টিপসই ব্যবহার না করে।

মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ সারোয়ার আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা যে কাজটি করছে তা অনেক বেশি প্রশংসনীয়। আমরা চাই এলাকা নিরক্ষরমুক্ত হোক।

লালমনিরহাট জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল বারী বলেন, বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুললে দেশে নিরক্ষর মানুষ থাকবে না। পাশাপাশি এমন উদ্যোগে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –