• মঙ্গলবার ০১ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

  • || ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগুনে ছাই তিশার ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

পুড়ে যাওয়া বাড়িতে সবাই ব্যস্ত নিজের ঘরের মালপত্র সরানোর কাজে। কেউ নিজের ঘরের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে করছেন আহাজারি। আবার কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপে নিজের প্রয়োজনীয় বস্তুটি খুঁজছেন। তবে এদের মধ্যে ব্যতিক্রম রোমানা আক্তার তিশা। পুড়ে যাওয়া বই আপন মনে ঘাঁটছিলেন তিনি।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নীলফামারী সৈয়দপুর পৌর শহরের রেলওয়ে কোয়ার্টারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিশা মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে। মা ও দুই ভাই-বোনসহ তিনি কোয়ার্টারে থাকতেন। ব্যাংকার হয়ে পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিশা। টাকার অভাব থাকলেও এইচএসসি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাদের বসতঘরের সব আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বইখাতাসহ তার সারা জীবনের অর্জিত সব সার্টিফিকেটও পুড়ে গেছে। একই সঙ্গে পুড়েছে তার স্বপ্নও।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিশা বলেন, ‘বাবা মারা গেছেন ১০ বছর আগে। বাসা ভাড়া দিয়ে কোনোরকম সংসার চালাতেন মা। আগুনে জমানো টাকাও পুড়ে গেছে। কাপড়, আসবাবপত্র, বইখাতা এমনকি সার্টিফিকেট পর্যন্ত বাঁচাতে পারিনি। আমার সারা জীবনের অর্জিত সব আমানত পুড়ে গেছে। আমার পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন কী করবো জানি না।’

এদিকে সব কিছু হারিয়ে দিশেহারা তিশার মা জাহেদা বেগম। ৩০ বছরের সাজানো সংসার চোখের সামনে পুড়ে ছাই হতে দেখ ভেঙে পড়েছেন তিনি।

জাহেদা বেগম বলেন, ‘পরনের একটা কাপড় নিয়ে বের হয়ে গেছি। আর কোনো কিছু বাঁচাতে পারিনি। রাস্তায় বের হয়ে চিৎকার করেছি, কেউ এগিয়ে আসেনি। আমার ৩০ বছরের সংসার চোখের সামনে শেষ হয়ে গেছে। আমার সব শেষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম, বড় হয়ে চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু ওর তো সব স্বপ্ন শেষ। এখন তিনটা সন্তান নিয়ে কী করবো কোথায় যাব জানি না। সরকারের কাছে সাহায্য চাই, যেন সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান বেবি বলেন, প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার করে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা রাত থেকে করা হবে। এছাড়া তাদের পুনর্বাসনের জন্য রোববার একটি সভা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র, শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর বই পুড়ে গেছে। তাদের পড়াশোনা ও পুনর্বাসনের জন্য রোববার সরেজমিনে যাবো।

তিনি আরও বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে পুনর্বাসন করা হবে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পৌর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় রেলওয়ে কোয়ার্টারে ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৬ পরিবারের ১৭টি ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা খুরশীদ আলম বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি দিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ জানা যাবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –