• মঙ্গলবার ০১ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৬ ১৪৩১

  • || ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রৌমারীতে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্কুলের সভাপতিকে পেটালেন শিক্ষক  

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

রৌমারীতে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্কুলের সভাপতিকে পেটালেন শিক্ষক       
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেওয়ায় বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুল ইসলামকে (৩৬) পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বারবান্ধা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় সোমবার রাতে নির্যাতনের শিকার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাদী হয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ দুইজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ঘটনার আগের দিন রোববার (২৯ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ওই সভাপতি।

অভিযুক্ত আবুল কাশেম (৪৮) উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারবান্ধা গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এছাড়া একই ইউনিয়নের বারবান্ধা গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে রঞ্জু মিয়াকে (৪০) আসামি করা হয়েছে। রঞ্জু মিয়া ওই প্রধান শিক্ষকের সম্পর্কে ভাতিজা।

ভুক্তভোগী সভাপতি মনিরুল ইসলাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বারবান্ধা গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে।

নির্যাতনের শিকার বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুল ইসলাম অভিযোগে জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরে উপজেলার উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত মোট ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫০২ টাকা যৌথ হিসাব নম্বরে জমা হয়। তৎকালীন সভাপতি আইয়ুব আলীর মেয়াদ শেষ হলে গত বছর মনিরুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে প্রধান শিক্ষকসহ ব্যাংকে যৌথ হিসাব খুলতে যান সভাপতি মনিরুল ইসলাম। এ সময় তিনি দেখেন ব্যাংকে জমানো কোনো টাকা নেই। সন্দেহ হলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে সমস্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম।

এর প্রতিকার চেয়ে রোববার (২৯ জানুয়ারি) সভাপতি বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। পরদিন (সোমবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই সভাপতি বারবান্ধা বাজার এলাকায় গেলে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ ভাতিজা রঞ্জু মিয়া তাকে মারধর করেন। এ সময় স্থানীয়রা সভাপতিকে উদ্ধার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওইদিন (সোমবার) রাতে মারধরের শিকার সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ দুইজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী বলেন, আমি এক বছর ধরে অসুস্থ। সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানি না এবং আমাকে জানানোও হয়নি। আমার স্বাক্ষর জাল করে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার অসুস্থতার খবর শুনেও একবারের জন্য দেখতে আসেননি ওই প্রধান শিক্ষক।

রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি ফিরোজ মিয়া বলেন, তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন ওই প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন তিনি। এর জের প্রধান শিক্ষক ও তার ভাতিজা রঞ্জু মিয়া মিলে সভাপতির ওপর হামলা চালান।

সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী অসুস্থতার কারণে সব কিছু ভুলে গেছেন। তার স্বাক্ষরেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সভাপতি মনিরুল ইসলামকে পেটানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমার ভাতিজা রঞ্জু মিয়ার সঙ্গে ঘটেছে। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মারধরের ঘটনায় মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত ও জখমের চিহ্ন রয়েছে, তিনি চিকিৎসাধীন।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম সরোয়ার রাব্বী বলেন, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হবে।

অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে রৌমারী থানার ওসি রুপ কুমার সরকার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –