• মঙ্গলবার ০১ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৬ ১৪৩১

  • || ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বেরোবিতে জমে উঠেছে পিঠা উৎসব, উপচে পড়া ভিড়

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩  

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) চলছে প্রথমবারের মতো পিঠা উৎসব। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ছাত্রকল্যান সমিতি সহ তিন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন এ পিঠা উৎসবে। 

উৎসবে হরেক রকম পিঠার পসরা সাজিয়ে হাজির হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ‍দিনব্যাপী উৎসবে ভিন্নধর্মী ও বাহারি পিঠাপুলি ও মুখরোচক খাবারের সমাহার নিয়ে হাজির হওয়া স্টলগুলোতে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

পিঠা বাংলার গ্রামীণ জনপদে অনন্য আমেজের নাম। বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুস্বাদু-মুখরোচক পিঠা মানেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। শীত এলেই ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা উৎসব। আধুনিক নগর সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী রকমারি পিঠা। তাই বাঙালির ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উদ্যোগে প্রথমবারের মতো পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকের সামনেই জমে উঠেছে পিঠা উৎসব। উৎসবে বিভিন্ন রকম পিঠার সমাহার নিয়ে বসেছে ২৯টি স্টল। বাহারি নামের পিঠাগুলো খেতে শিক্ষার্থী ও ক্রেতাদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভাপা, হ্দয় হরণ, মেমো, কটকটি, চকলেট, গাজরের লাড্ডু, কানাইপুর, বৌ, বরফি, দুধ চিতই, মিস্টি, কামরাঙ্গা, কুশলি, চালের কলা পাতা, ডিম সুন্দরী, ঋিনুক,ম্যাজিক, পুলি, মুগ পাকাল, নক্ষত্র গুড়গুড়ি,পাকন, নোনতা, দুধ গোকুল, আতিক্কা, আপেল সন্দেশ, শাহি টুকরা, ডিম সুন্দরী, ফিরনী, বৃত্তীয়, মাসরুম, সিজি,পুরভরা, ঝিলমিল, মতিচূর, ফিরিজ পিঠা, সিরিজ, লবঙ্গ লতিকা, শঙ্ক চুশি, গোলাপ জামন, রসায়ন রঙ্গিলা প্যান কেক, নুসাস, নকশি, নসাপটা, বিস্কুট, ফুসকা, চিকেন পুলি, সেমাই, ঝাল পুলি, নোনাস, পানতোয়া, গোলাপ কিমা, জামাই পিঠা, বিন্নী চালের পিঠা, ডিম পিঠা, চিকেন পুলি, গুড়ের সন্দেশ, চকলেট পিঠা, কুলশি পিঠা, মিষ্টি পোয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন দামে বিক্রি করছেন এসব পিঠা। ১০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে এসব বাহারি রকমের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে স্টলগুলোতে।

পিঠা উৎসবে আসা ম্যানেজমেনট বিভাগের নিশাত বলেন, এ শীতে মায়ের হাতের পিঠা খুব মিস করছি। ক্যাম্পাসে বসে শীতের পিঠা উৎসবের আয়োজন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

পিঠা উৎসবে আসা ইংরেজী বিভাগের তামিম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধারণ এবং সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে অটুক রাখতে আমাদের এ আয়োজন। আমরা আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি বছর এ আয়োজন অব্যাহত রাখবে।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি, ২০২৩) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনা।  

বেরোবি শীতকালীন পিঠা উৎসব আয়োজন কমিটির আহবায়ক উমর ফারুকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য বলেন, পিঠাপুলি আমাদের গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। আধুনিক যান্ত্রিক যুগে এসে পিঠার ঐতিহ্য ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছে। পিঠা উৎসবের মতো দেশীয় সংস্কৃতি চর্চায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে অতীত ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা করার আহবান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মজিব উদ্দিন আহমদ বলেন, পিঠা উৎসব আমাদের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। এ ধরনের আয়োজন পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।

এসময় আমন্ত্রিত অতিথিরা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। পিঠার স্বাদ উপভোগের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজনও করা হয়।

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাকিউর রহমানের সঞ্চালনায় পিঠা উৎসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ শরিফুল ইসলাম,  শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ,  রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী,  প্রক্টর গোলাম রব্বানি, বহিরাঙ্গন কার্যক্রম দপ্তরের পরিচালক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন। এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –