• বুধবার ০২ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৭ ১৪৩১

  • || ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইকো ব্রিকসে ভাগ্য বদলেছে সিদ্দিকের

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩  

কৃষিকাজ করে সংসারের ভরণপোষণ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল সিদ্দিকের। আবাদি জমি অল্প হওয়ায় কৃষি থেকে আয় হত কম। তাই বাড়ির পাশে একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে শুরু করেন বাথরুমের ফিটিংস ও স্যানিটারীর (রিং, স্ল্যাপ তৈরি) ব্যবসা। তবে এই ব্যবসায় সফল হয়ে উঠতে পারছিলেন না তিনি।

পরে ব্যবসায়ের মোড়ক পরিবর্তনের চিন্তা করেন সিদ্দিক। স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) সহযোগিতায় নতুন স্বপ্নের ছোঁয়া পান তিনি। সংস্থাটির সহযোগিতায় ইকো ব্রিকস তৈরি করে সফলতার মুখ দেখছেন সিদ্দিক। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামের মৃত রশিদুল হকের সন্তান আবু বক্কর সিদ্দিক। কৃষির পাশাপাশি পাঁচ বছর ধরে স্যানেটারী ব্যবসা করে আসছেন তিনি। পরে এক বছর আগে পাঁচ দিনব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণ নেন ৷ প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করে এখন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন তিনি। 

আবু বক্কর সিদ্দিক পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) কর্তৃক বাস্তবায়িত সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)’র সাব-সেক্টরের আওতায় পরিবেশবান্ধব হলো-ব্লক ও ইকো ব্রিকস তৈরি করছেন ৷ বছর যেতে না যেতেই সফলতার দেখা পেয়েছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন মায়ের দোয়া হলো ব্লক ফ্যাক্টরি। পাশাপাশি তৈরি হয়েছে স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান।  

কারখানায় কর্মরত শ্রমিক রশিদুল ইসলাম বলেন, আগে পোড়ামাটির ইটভাটায় কাজ করতাম। সে কাজ বাদ দিয়ে এখানে এখন হলো ব্লক ও পরিবেশবান্ধব ব্রিকস তৈরির কাজ করছি। আগের চেয়ে এখানে কষ্ট কম বেতন বেশি। আগের তুলনায় এখন পরিবার অনেক ভালো চলছে আমার৷ 

ব্রিকস কিনতে আসা আব্দুস সোবহান বলেন, আগের দুইটি ঘর আমার রয়েছে। সে দুটো ঘর পোড়া মাটির ইটে তৈরি করা। এবার নতুন করে একটি ঘর তৈরির জন্য এই ব্রিকসগুলো কিনতে এসেছি। যতটুকু জেনেছি এগুলো দিয়ে ঘরের কাজ করালে প্লাস্টার করার তেমন কোনো চিন্তা থাকে না। সেই সঙ্গে পোড়া মাটির পাঁচটি ইটের সমান একটি ইট। 

উদ্যোক্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,আমি স্যানিটারী মালের ব্যবসায় করি। ইএসডিও এর আওতায় একটি বাথরুমের কাজ করেছিলাম। সেখান থেকে তাদের সঙ্গে আমার পরিচয়। পরে তারা আমাকে জানান প্রশিক্ষণ দিয়ে ইকো ব্রিকস তৈরির প্রক্রিয়া শেখানো হবে। আমি প্রথমে এটি সম্পর্কে জানতাম না। পরে জানার পর দেখলাম এটি অনেক পরিবেবান্ধব। এ ইটের মাধ্যমে আবাদি জমি ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। তারপর পাঁচ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি ব্রিকস তৈরির কাজ শুরু করি। তারা আমাকে মেশিন দিয়ে সহায়তা করেন। এখনো আমার এই ইকো ব্রিকসের ব্যবসা বেশ ভালো চলছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে এটি ব্যবহারে প্লাস্টার জরুরিভাবে করার দরকার হয় না। তাই মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আমার নিজের ব্যবসার পাশাপাশি এখানে আরও তিনজনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আগের চেয়ে ব্যবসায় আয় বেড়েছে। সামনে এটিকে আরও বড় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি৷ 

সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট ইএসডিও-এর টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (আর্কিটেক্ট) তওফিক -উল আলম বলেন, পোড়া মাটির ইট তৈরির সঠিক প্রক্রিয়া ব্যবহার না করার কারণে আবাদি জমিসহ আমাদের পরিবেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশকে এ ধরনের হুমকির হাত থেকে বাঁচাতেই আমরা হলো ব্লক ও ইকো ব্রিকস নিয়ে কাজ করছি। এটিতে একজন গ্রাহক নানাবিধ সুবিধা পাবেন। ঘর তৈরির জন্য এমনি পাঁচটি ইটের সমান একটি ব্রিকস। গাঁথুনি করতেও খরচ অনেক কম৷ ঘর করার পর প্লাস্টার করতে অনেক টাকা লেগে যায়। এ ইট ব্যবহার করা হলে প্লাস্টার না করেও দেখে প্লাস্টারের মত মনে হয়। অল্প খরচে সুন্দর করে ঘর তৈরির জন্য ব্রিকস একটি অন্যতম বলে আমরা মনে করছি। 

সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট ইএসডিও-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় আমরা করছি। আমরা প্রথমে তাদের আবাসিক প্রশিক্ষণ দিয়েছি। মূলত হলো ব্লক ও ইকো ব্রিকসে জ্বালানি হিসেবে কাঠের যে ব্যবহার সেটি থাকছে না। যে কারণে এটি পরিবেশবান্ধব। আমাদের ১৮ জন উদ্যোক্তা সফলভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আরও কেউ এ উদ্যোগে আগ্রহী হলে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে৷ 

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –