• বুধবার ০২ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৭ ১৪৩১

  • || ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শীত নিবারণ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারি ২০২৩  

তীব্র শীত ঘন কুয়াশায়, আর হিমেল হাওয়ায় এ অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষরা পড়েছেন নিদারুণ কষ্টে। শীত নিবারণ করতে গিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে একজনের মৃত্যু এবং ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। শীতজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেও।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান জানান, শনিবার রংপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা থাকতে পারে আরও কয়েকদিন। বিকেল থেকেই ঘনকুয়াশায় ঢেকে যায় পুরো এলাকায়। সন্ধ্যার পরেই বেড়ে যায় শীত, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শীতে কষ্ট করছে মানুষ। গ্রামে থাকা ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা যাচ্ছে।

শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। 

পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউপির বিরাহীম এলাকার দুলাল খান জানান, এবার খুব শীত ও ঠান্ডায় থাকা যায় না। বিশেষ কওে সকালে জমিতে কাজ করতে বেশ কষ্ট হয় শীতের কারনে। ফসল উৎপাদন করতে হবে যতই শীত থাকনা কেন।  

বাস চালক রহমান আলী জানান, যখন সড়কে গাড়ি চালাই তখন খুব সাবধানে চালাতে হচ্ছে, গাড়ির সামনে কিছু দেয়া যায় না। ভয় ভয় করেই গাড়ি চালাই। দিনের বেলাতেও লাইট জ্বালাইতে হয়। রংপুর রেল স্টেশনে বসবাস হাবলু শেখ জানান, আামার বাড়ি তিস্তার চরে। আমার ছেলে মেয়ে কেউ খবর রাখে না। সারাদিন মাসুষের বাসা বাড়ি গিয়ে চেয়ে চেয়ে খাই। রাতে এখানে ঘুমাই। রাতে খুব ঠান্ডা লাগে।

রংপুর মেডিকেল বকলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন জানকী ধাপেরহাট এলাকার বাবলি বেগম বলেন, ‘শুক্রবার সকালে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে নেভানোর চেষ্টা করি। ততক্ষণে শরীরের কিছু অংশ আগুনে পুড়ে যায়। বর্তমানে হাসপাতালোত আছি। চিকিৎসা চলছে, একনা ভালো আছি।’ 

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নজরুল ইসলাম বলেন, আমার মা ফাতেমা বেগম সকালে আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানবশত পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। শরীরের নিচের দিকের প্রায় ২০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। এরপর দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ দিনে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। তাদের সবার শরীর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আবদুল হামিদ পলাশ বলেন, শীতের শুরুতে রংপুর অঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শীতের সময় গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কাজ করা উচিত।

রংপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, এবার শীত মৌসুমে ৫৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৬০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে জরুরি ভিত্তিতে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সেগুলো পাব। শীতবস্ত্র পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো দেয়া হবে।

রংপুর জেলা প্রশাসন ড. চিত্র লেখা নাজনীন বলেন, আমি এবং আমাদের প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এরইমধ্যে অনেকগুলো জায়গাতেই নিজেই খোঁজ খবর নিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। আমরা আরও কিছু শীতবস্ত্র পেয়েছি যেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে এবং হবে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –