• বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডাবল মার্ডার রহস্য উদঘাটন

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০১৮  

রাজধানীর তুরাগের চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগ। খুনের অভিযোগে মো. মনির হোসেন ও মো. ফরিদ নামের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো বটি ও রড উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর আদাবরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে মনির ও রাতে শনির আখড়া থেকে ফরিদকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি জানায়, গত ২০ অক্টোবর রাতে তুরাগের উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর প্লটের কাশবন ঘেরা স্থানে ২টি অজ্ঞাত পরিচয় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুটি লাশেরই চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় তাদের শনাক্তে জটিলতায় পড়ে পুলিশ। পরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর প্রকাশিত হলে পরদিন লাশ দুটি শনাক্ত করেন তাদের স্বজনেরা।

এপর শনাক্ত হয় কামাল হোসেন (২৪) ও ইমন শেখ (২৫) এর মরদেহ।

এ ঘটনায় নিহত কামালের বাবা শেখ জলিল বাদী হয়ে তুরাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নামে ডিবির উত্তর বিভাগ। তবে কোনোভাবেই মামলার সুরাহা না হওয়ায় একপর্যায়ে ডিবির উত্তর বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের কাছে তদন্তভার দেয়া হয়।

এরপর বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মনির ও ফরিদকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

যে কারণে হত্যা করা হয়: গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, নিহত কামাল ও ইমনসহ গ্রেফতারকৃতরা একটি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। তারা তাদের ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্য রেজাউল, আল-আমিনসহ রাজধানীর তুরাগের বেড়িবাঁধ, উত্তরা এলাকা এবং ফরিদপুরসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় চলাচলকারী গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করতো। দিনের বেলা তারা কখনো রংমিস্ত্রি, কখনো গাড়ির ড্রাইভার-হেল্পার হিসেবে কাজ করতো। গভীর রাতে প্রথমে তারা রোড ডিভাইডারের খণ্ড, বড় পাথর ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাস্তায় চলাচলকারী প্রাইভেটকার, সিএনজি ইত্যাদির পথরোধ করতো। তারপর ধারালো দা, বটি, লোহার রড ইত্যাদি বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে যাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার লুট করতো। কাজ শেষে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত লুন্ঠিত মালামাল। এই ভাগাভাগি থেকেই সৃষ্টি হয় কোন্দল। বিভিন্ন সময় কামাল ও ইমন লুণ্ঠিত মালামালের অধিকাংশ নিয়ে নেয়ায় বাকিদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ ফরিদপুরে একটি ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। তখন প্রতিশোধ নিতে গ্রেফফতারকৃতরা কামাল ও ইমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

যেভাবে হত্যা করা হয়: গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিহত কামাল ও ইমনসহ গ্রেফতার ২জন এবং রেজাউল নামের ডাকাতদলের অন্য এক সদস্য ডাকাতির উদ্দেশ্যে একে একে তুরাগের উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরে মিলিত হয়। রাত ৯ টার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর ১৬ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর প্লটে কাশবনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মনির ও ফরিদের সঙ্গে থাকা ধারালো বটি ও লোহার রড দিয়ে কামাল ও ইমনকে এলোপাথাড়ি মারধার এবং কোপাতে থাকে। এসময় ভয় পেয়ে সেখান থেকে রেজাউল দৌড়ে পালিয়ে যায়। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট উপুর্যপরি আঘাতের পর রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত দুজনের লাশ ফেলে পালিয়ে যায় গ্রেফতারকৃতরা। পালানোর সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো বটি ও রড রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর ফেলে দেয় তারা।

যেভাবে পালিয়ে থাকে হত্যাকারীরা: জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পরপরই মনির গাবতলী এলাকায় নিজের আবাস ছেড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান অবস্থায় ঘুরে বেড়াতে থাকে। আর ফরিদ রাজধানী ছেড়ে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবায় পালিয়ে থেকে ডাকাত দলের সদস্য জড়ো করে পুনরায় ডাকাতির পরিকল্পনা করতে থাকে।

গোয়েন্দা পুলিশ গোপন সূত্র ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ফরিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।

– দৈনিক পঞ্চগড় নিউজ ডেস্ক –